বিতর্কিত তিনটি ইসির সবার পাসপোর্ট বাতিল

Share

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে পাতানো নির্বাচনের অন্যতম সহযোগী হিসাবে সাবেক তিন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্যদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। সম্প্রতি তাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নূরুল হুদাকে গ্রেফতারের পর যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র।

সূত্র জানায়, পাসপোর্ট বাতিলের তালিকায় রয়েছেন সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, কেএম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল। এছাড়া কমিশন সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করা আরও ১২ জন কমিশনারের নাম রয়েছে। যাদের প্রত্যেকের বর্তমান অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহম্মদ নুরস ছালাম সোমবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, বিগত সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশনে সিইসিসহ কমিশনার হিসাবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের সবার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। তাদের মেয়াদকালে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়, যা পরে ‘জোরজবরদস্তির নির্বাচন’ নামে পরিচিতি পায়। এ সময় নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন মো. শাহ নেওয়াজ, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, মোহাম্মদ আব্দুল মোবারক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বে ২০১৭ সালের নির্বাচন কমিশনে অন্য সদস্য ছিলেন কবিতা খানম, মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম ও শাহদাত হোসেন। বহুল আলোচিত এই কমিশন ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ‘রাতের ভোটের’ নির্বাচন কমিশন হিসাবে পরিচিত।

এছাড়া ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী কাজী হাবিবুল আওয়াল কমিশনের সদস্য ছিলেন মোহাম্মদ আলমগীর, আনিসুর রহমান, আহসান হাবিব খান ও রাশিদা সুলাতানা। এই কমিশন ‘আমি ও ডামি’ কমিশন নামে সমালোচিত হয়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থীর বাইরে ডামি প্রার্থী হিসাবে তাদের দল থেকে বেশ কিছুসংখ্যক প্রার্থী দাঁড় করায়।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানায়, প্রাধিকার অনুযায়ী সিইসিসহ সাবেক কমিশনাররা কূটনৈতিক মর্যাদার লাল পাসপোর্ট পান, যা ‘ডিসি’ আদ্যাক্ষর দিয়ে শুরু হয়। তবে অবসর গ্রহণের পর বিশেষ সুবিধার লাল পাসপোর্ট সমর্পণ করে তাদের সাধারণ পাসপোর্ট নিতে হয়। নিয়মানুযায়ী বিগত তিনটি কমিশনের প্রত্যেকে পরবর্তী সময়ে সাধারণ (ই-পাসপোর্ট) গ্রহণ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, পাসপোর্ট অধিদপ্তর শুধু সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক পাসপোর্ট ইস্যু বা বাতিল করতে পারে। কিন্তু কারও বিদেশ গমন সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপের এখতিয়ার ডিআইপির হাতে নেই। ফলে পাসপোর্ট বাতিলের আগেই সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের কেউ দেশত্যাগ করে থাকলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তা জানার কথা নয়।

সূত্র বলছে, বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগে সরকারের একাধিক সংস্থার তরফে সম্প্রতি সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের বহির্গমন সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশের পাশাপাশি ডিআইপির কাছেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের অর্থসম্পদের বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

Read more