যশোর প্রতিনিধি : মণিরামপুরে মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়া পদে চাকরি না পেয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে জুতা পিটা করেছেন এক নারী। অভিযোগ, মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক স্থানীয় খাকুন্দি গ্রামের কুলসুম বেগমকে আয়া পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাকে চাকরি না দিয়ে আসমা খাতুন নামে মনোহরপুর ইউপির সংরক্ষিত নারী সদস্যকে (১,২ ও ৩) চাকরি দিয়েছেন।
শুধু জুতা মেরে থামেননি কুলসুম বেগম সভাপতি সিরাজুল ইসলামের অনিয়মের বিচারের দাবিতে গ্রামবাসীকে জড়ো করে সমাবেশও করেছেন। শনিবার বিকেলে মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে শত শত গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগী কুলসুম বেগম বলেন, আমার শ্বশুর মান্দার মোড়লের জমিতে মনোহরপুর স্কুল। জমি দানের সময় শর্ত ছিল বিদ্যালয়ে কোন পদ খালি হলে যোগ্যতা অনুযায়ী দাতা মান্দার মোড়লের পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি দিতে হবে। আমরা সে অনুযায়ী আয়া (শূন্য পদে) আবেদন করেছিলাম। দাতা পরিবার হলেও চাকরি দেওয়ার কথা বলে সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। সভাপতি নিয়েছেন ৩ লাখ আর প্রধান শিক্ষক ৩ লাখ।
কুলসুম বেগম বলেন, চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সভাপতি আমাকে দিয়ে তার বাড়ি আয়ার কাজ করিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়োগ বোর্ড বসে। বোর্ড বসার আগে সভাপতি ১ লাখ টাকা নেয়। পরে শুনি আমারে চাকরি না দিয়ে ইউপি মেম্বর আসমা খাতুনকে চাকরি দেছেন।
কুলসুম বেগম বলেন, চাকরি না পেয়ে শুক্রবার সকালে কাচারিবাড়ি মোড়ে সভাপতি সিরাজুল ইসলামকে পেয়ে আমি তার কাছে টাকা চাই। তখন তিনি আমার সাথে খারাপ আচরণ করলে আমি জুতা খুলে তাকে মারি।
সিরাজুল ইসলাম মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ৬-৭ বছর আগে তিনি অবসরে যান। এরপর দেড় বছর ধরে তিনি একই প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। সিরাজুল ইসলাম মনোহরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
কুলসুম বেগম বলেন, নিয়োগ বোর্ডের আগের রাতে আমার বাড়ি প্রশ্ন পৌঁছে দেন সভাপতি। আমার পদে পাঁচজন পরীক্ষা দেছেন। আমি ছাড়া বাকি কারও আবেদন করা ছিল না। বিনা আবেদনে ১১ লাখ টাকা নিয়ে আসমা খাতুনকে চাকরি দেছে।
অভিযোগ রয়েছে, স¤প্রতি মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চারটি শূন্যপদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রার্থীর নিকট থেকে অর্থ বাণিজ্য শুরু করেন বিদ্যালয়ের সভাপতি। তার সাথে সহযোগিতা করেন বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রিয়াদ হোসেন, সহকারী শিক্ষক ইমদাদুল হক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য শহিদুল ইসলাম। তারা একাধিক প্রার্থীকে চাকুরি দেয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়ে প্রায় ৪৮ লাখ টাকা বাণিজ্য করেন। একপর্যায়ে অধিক পরিমাণ টাকার বিনিময়ে আয়া পদে আবেদন বিহীন প্রার্থী ইউপি সদস্য আসমা বেগম ও দপ্তরি পদে সভাপতির আপন চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আলীসহ সভাপতির আস্থাভাজন চারজনের নিয়োগ চুড়ান্ত করেন। এরপরই একাধিক প্রার্থীর নিকট থেকে অর্থবাণিজে্যর বিষয়টি জানাজানি হয়।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, কুলসুমের চাকরি না হওয়ায় সে আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকটি কথা বলেছেন। এর বেশি আমার সাথে কিছু হয়নি। আমার প্রতিপক্ষ এসব খারাপ কথা রটাচ্ছেন। আমি কারো কাছ থেকে টাকা নিইনি।
স্থানীয় আব্দুস সাত্তার বলেন, সভাপতিকে ওই নারী আমার সামনে জুতা দিয়ে পিটিয়েছেন।
ওয়াজেদ আলী নামে এক বৃদ্ধ বলেন, এ কমিটি স্কুলটা শেষ করে দিলো।
মনোহরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কালিপদ মণ্ডল বলেন, স্কুল কমিটির অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠে সমাবেশ ডেকেছে।
মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মশিয়ার রহমান বলেন, স্কুলের সভাপতি টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়ায় এক নারী তাকে জুতা দিয়ে পিটেছে বলে শুনেছি।
এব্যাপারে জানতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকারের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হয়েছে। তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি