করিডর এবং বন্দর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয় ” তারেক রহমান

Share

ঢাকা টাওয়ার ডেস্ক —

মিয়ানমার এর রাখাইন রাজ্যে গৃহযুদ্ধ কবলিত জন্য ‘মানবিক করিডর’ দেওয়া এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমান।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ‘এনডিএম’ অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ বক্তব্য গুলো বলে।

ঢাকার গুলশানে একটি হোটেলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে করিডর প্রদান কিংবা বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশির হাতে তুলে দেওয়াটাকেই বেশি প্রাধান্য বলে মনে হচ্ছে।

আমরা আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, করিডর কিংবা বন্দর দেওয়া না–দেওয়ার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়, এই সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ বা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত (চেয়ারম্যান) বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের চিন্তা ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে থাকায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে হয়তো অস্থিরতা বাড়ছে, বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ রাজপথে জড়ো হচ্ছেন,, মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকারের ভেতরে ও বাইরে একধরনের অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে ‘ সরকার জনগণের ভাষা, আশা–আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে।’

দেশের এভাবে অস্থিরতা বাড়লে সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তারেক রহমান। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের সক্ষমতা সম্পর্কে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ‘পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণার’ দাবি জানিয়েছেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো, যারা দীর্ঘ দেড় দশক ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন–সংগ্রামে একসঙ্গে আমরা রাজপথে ছিলাম, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামর্থ্য ও সক্ষমতা সম্পর্কে আমরা এখনো নেতিবাচক মন্তব্য করিনি ” আমাদের অবস্থান থেকে আমরা চুপ থাকলেও জনমনে এই সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন এরই মধ্যে উঠেছে। বহু মানুষ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এরই মধ্যে কথা বলছেন।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান সংকট নিয়েও কথা বলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘সরকার এনবিআরের সংস্কার শুরু করেছে। এনবিআর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে হয়তো কারও কোনো তেমন দ্বিমত নেই।

কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও পরিণতি চিন্তা না করে তড়িঘড়ি করে সংস্কার শুরু করে দেওয়ায় পুরো বিষয়টি হিতে বিপরীত হয়েছে, যা এরই মধ্যে আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি।’

দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতিও আশাব্যঞ্জক নয় বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ব্যাপক আয়োজনে বিনিয়োগ সম্মেলন করলেও কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ কিন্তু আসেনি। দেশি কিংবা বিদেশি বিনিয়োগ পরিবেশের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং স্থিতিশীল একটি সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গণতান্ত্রিক বিশ্বে শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদেরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করেন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘সরকার কিন্তু কোনো একটি এলিট ক্লাব কিংবা করপোরেট প্রতিষ্ঠান নয়। সরকার অবশ্যই একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এই রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে দেশের প্রতিটি নাগরিকের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকতে হবে।’

আগামী দিনে আর কোনো স্বৈরাচার যাতে দেশ ও জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সে জন্য গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের এখনই উপযুক্ত সময়। যদিও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা কিংবা সামর্থ্য নিয়ে ইতিমধ্যে হয়তো জনগণের মধ্যে কিছুটা হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তবু গণতন্ত্রের পক্ষের দলগুলো জনগণের ভোটে, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন এখনো অব্যাহত রেখেছে।

বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনার ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে আসছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘সকল কিছু বিবেচনা করলে আমরা দেখতে পাই, সরকার কিন্তু সেই আহ্বানে সেভাবে সাড়া দেয়নি। সরকার বরং জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন–তারিখ ঘোষণাকে সুকৌশলে ‘‘অল্প সংস্কার’’, ‘‘বেশি সংস্কার’’—এ ধরনের এক অভিনব শর্তের বেড়াজালে বলা যায় আটকে দিয়েছে।’

গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের সংখ্যা ও তালিকা অন্তর্বর্তী সরকার ১০ মাসেও কেন চূড়ান্ত করতে পারল না, সে প্রশ্নও তুলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এটা সরকারের সক্ষমতার অভাব নাকি হতাহতদের ব্যাপারে উদাসীনতা; তা দেশের মানুষের একটা বড় জিজ্ঞাসা।

‘এনডিএম’ এর (চেয়ারম্যান) ‘ ববি হাজ্জাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মোমিনুল আমিন, উচ্চ পরিষদ সদস্য পারভেজ খান প্রমুখ। এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ বিভিন্ন দলের নেতা এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবের বীর যোদ্ধাদের সম্মাননা এবং শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের জন্য দোয়ার আয়োজন করা হয়।

Read more