যশোর প্রতিনিধি
যশোরের বকচর এলাকার সিন্ডিকেটে অভিযান চালিয়েছে যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ। অভিযানে ময়মনসিংহ ঢাকা বগুড়াসহ কয়েকটি জেলা থেকে চুরি হওয়া ডজন খানেক ট্রাকের খোঁজে পরিচালিত অভিযানে চোরাই একটি ট্রাকও উদ্ধার হয়েছে।
জানাযায় ট্রাক বেচাকেনার সাথে জড়িত অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক গ্যারেজ মালিকসহ ৪ জনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। এদিকে, ওই ট্রাকটি চোরাই নয় দাবি করেন গ্যারেজ মালিক। এছাড়া স্থানীয় পুরাতন লোহা ও মটরপার্টস ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা পুলিশের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এ সময় শ’ শ’ ব্যবসায়ী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। থানা সূত্র জানিয়েছে, অন্য জেলা থেকে চুরি করে আনা ট্রাক যশোরে, আর যশোর থেকে চুরি করা ট্রাক অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করে কুখ্যাতি রয়েছে যশোরের বকচর এলাকার সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্রের। সম্প্রতি ময়মনসিংহ, ঢাকা, নরসিংদী, বগুড়াসহ আরও কয়েকটি জেলা থেকে কয়েক ডজন ট্রাক চুরি হয়। ঢাকা জেলার ট্রাক চুরি মামলাগুলো তদন্ত করছে ঢাকা জেলা গোয়েন্দা শাখা। তবে সম্প্রতি ময়মনসিংহ থেকে একটি ট্রাক চুরি হলে মালিক পক্ষ তথ্য পান যশোরের বকচর এলাকায় শক্তিশালী ট্রাক চোর ও বিকিকিনি সিন্ডিকেট রয়েছে। ময়মনসিংহের এ ট্রাক মালিক যশোরে এসে কোতোয়ালি পুলিশের সহায়তা কামনা করেন। ওই তথ্যে ৩০ আগস্ট থানার এসআই হারুন অর রশিদ ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেন। বিকেল সাড়ে ৩ টায় বকচরের খান সাহেব মসজিদের পাশের চিটু রহমানের গ্যারেজের সামনে থেকে চোরাই আখ্যা দিয়ে একটি ট্রাক উদ্ধার করেন অভিযানিক টিম। এ সময় গ্যারেজ মালিক চিটু রহমান, তার ছেলে রবিন, একই এলাকার রবিউল ইসলাম ও আনিছুর রহমান নামে ৪ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। এদিকে অভিযান পরিচালনা করার সময় পুরাতন লোহা ও মটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা একাট্টা হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা পুলিশের সাথে বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হন। গ্যারেজ থেকে ট্রাক নিতেও প্রথমে বাধা প্রদান করেন। তবে পুলিশ শেষমেশ ট্রাক উদ্ধার করে নিয়ে গেলে ব্যবসায়ী সমিতির (২৪৪২) শ’ শ’ সদস্য রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা জানান, পুলিশ প্রায়ই তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ ব্যাপারে পুরাতন লোহা ও মটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য শ্রমিক নেতা মিন্টু গাজী জানিয়েছেন, কোনো বাদী বা অভিযোগকারী না থাকলেও কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অভিযানের নামে পুলিশ তাদের ব্যবসা ও আর্থিক ক্ষতি করছে। একেতো করোনায় ব্যবসা নেই, সবার মাথায় হাত! তার উপর অকারণে হয়ারানী মূলক অভিযান। এরপরও অকারণে অভিযান চালিয়ে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে। চিটু রহমানের গ্যারেজ থেকে যে ট্রাকটি পুলিশ নিয়ে গেছে সেটি চোরাই নয়, একজন ট্রাক মালিক তার ট্রাকের বডি পরিবর্তন করতে এসেছিলেন গ্যারেজে। তার যথেষ্ট প্রমান রয়েছে। তবে, থানার এসআই হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, ট্রাকটি চোরাই বলে নির্দিষ্ট অভিযোগ এবং তথ্যে অভিযান চলেছে। সংশ্লিষ্ট ট্রাকটি উদ্ধার হয়েছে। ময়মনসিংহ থেকে ওটি চুরি করে যশোরে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে থানায় আনা হয়েছে। কাগজপত্র যাচাইবাছাই চলছে। এদিকে, বকচরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওই এলাকার একটি সংঘবদ্ধ চক্র দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, পিকআপ, প্রাইভেট কার ও কাভার্ড ভ্যান চুরি করে যশোর আনছে। এগুলো দেয়া হচ্ছে শহরের বকচর এলাকার কয়েকটি চিহ্নিত গ্যারেজে। এ চক্রের সদস্যরা প্রত্যেকেই গাড়ি চালানোই পারদর্শী। যশোর ছাড়াও বিভিন্ন শহরের গ্যারেজের সাথে রয়েছে এদের সুসম্পর্ক। বকচর এলাকার কয়েকটি চিহ্নিত গ্যারেজে চোরাই গাড়ির নতুন বডি বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্য জেলা থেকে চুরি করে আনা ট্রাক যশোরে এনে গ্যারেজে ফেলে খন্ডখন্ড করা হচ্ছে। তারা রাতারাতি একটি গাড়ির যন্ত্রাংশ অবৈধভাবে অন্য গাড়িতে সংযোজন এবং রঙ পরিবর্তন করেও দিয়ে থাকে। এজন্য তাদের এক্সপার্ট কর্মীও রয়েছে। দ্রুত চক্রের সবাইকে আটক করার দাবি স্থানীয়দের।