হত্যাচেষ্টা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে ব্যারিস্টার সুমন

ঢাকা অফিস: রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার এক ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে।

মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে আদালতে তোলে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ। এর আগে সোমবার (২১ অক্টোবর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মিরপুর-৬ এলাকা থেকে ব্যারিস্টার সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

উপ-পরিদর্শক আব্দুল হালিম ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালত সুমনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে এজলাসে তোলার সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা চোর চোর বলে চিৎকার করেন। এসময় ব্যারিস্টার সুমনকে কান্নারত ও চোখ মুখ লাল অবস্থায় দেখা যায়। টিস্যু দিয়ে তাকে চোখ মুছতে দেখা যায়।

শুনানির শেষে সুমন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা বলতে চান। তবে কথা বলতে রাজি হননি প্রসিকিউটর ওমর ফারুক। তখন সুমন বলেন, ‘আপনার সঙ্গে আলাদা করে কিছু বলব না স্যার। আপনার মাধ্যমে সব আইনজীবীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি খুব স্যরি স্যার।

কিন্তু কেন দুঃখপ্রকাশ করলেন ব্যারিস্টার সুমন? আগ্রহ জন্মেছে কৌতূহলী মহলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে না থাকায় স্যরি? না-কি নানাভাবে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করায়? না-কি এসব নয়, অন্য কিছু?

রিমান্ড শুনানিতে পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘ব্যারিস্টার সুমন প্রতারণার মাধ্যমে কাজ করে থাকেন। রাজনীতিতে কিছু মানুষ আছে, যারা প্রকৃত রাজনীতি করে না। তিনি সংসদে নিজেকে সেলফি এমপি দাবি করেছিল।

সবচেয়ে বেশি টাকার গাড়ি আমদানি করেছিল। ফেসবুকে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে প্রতারণা করত। নিজের মানুষ দিয়ে আগে থেকে এসব তৈরি করে রাখত। প্রতারণা করে নিজেকে অবৈধ এমপি ঘোষণা করেছে। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পক্ষ নিয়েছেন।

সরকার পতনের পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় মিরপুরের বাঙালিয়ানা ভোজ হোটেলের সহকারী বাবুর্চি হৃদয় মিয়া বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা মামলাটি করেন। মামলায় এজাহারনামীয় ৩ নম্বর আসামি ব্যারিস্টার সুমন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে গত ১৯ জুলাই তিনি গুলিতে আহন হন। তিনি সেদিন জুমার নামাজ আদায় করে মিরপুর-১০ নম্বরে সমাবেশে যান। সেখানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ককটেল নিক্ষেপ ও গুলি চালিয়ে হামলা করে। এসময় গুলিবিদ্ধ হন হৃদয়। তিনি হবিগঞ্জের মাধবপুর ১০ নং হাতিয়াইন ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি।

এ মামলায় গ্রেপ্তারেরে আগে সুমনের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। ৫ আগস্টের আগে পরে যে কয়েকজন এমপি-মন্ত্রী, নেতার দেশ ছাড়ার খবর ছড়ায় তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার সুমনের নামও ছিল।

তবে আড়াই মাস পর সোমবার গভীর রাতে নিজের গ্রেপ্তারের খবর জানিয়ে এক ফেসবুক পোস্টের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ভিডিও বার্তায় সুমন বলেন, ‘আমি দেশেই আছি, ঢাকা শহরেই আছি। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে আমি নিজের অবস্থান একটু গোপন রেখেছি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট ও লাইভ করে আলোচনায় আসা ব্যারিস্টার সুমন গত ৭ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে স্বতন্ত্র অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মাহবুব আলীকে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছিলেন।

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মধ্যে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। তিন দিন পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর একে একে গ্রেপ্তার হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও প্রভাবশালী এমপিরা।