ঢাকা অফিস: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে একটি ভ্যানে গুলিতে নিহত একাধিক লাশ স্তূপ করে রাখছে পুলিশ- এমন একটি ভিডিও শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকেই সারা দেশে আলোচনা ভিডিওর ঘটনাস্থল জানতে। ভিডিওতে দেয়ালে সাঁটানো একটি পোস্টার দেখে এর ঘটনাস্থল ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়া থানার সামনে বলে জানা গেছে।
শনিবার সকালে আশুলিয়া থানার সামনের এলাকায় গিয়ে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ঘটনাস্থলের সাথে ওই স্থানের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে ভিডিওটি আশুলিয়া থানা ভবনের সামনের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ধারণ করা হয়।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দুজন পুলিশ সদস্য একটি মরদেহের হাত ও পা ধরে সেটি সামনে থাকা মরদেহভর্তি একটি ভ্যানে ছুড়ে ফেলছেন। পরে মরদেহটি শেখ মুজিবর রহমানের ছবি সংবলিত একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে পাশের দেয়ালে সাঁটানো একটি পোস্টার দেখা যায়, যেটি আশুলিয়া থানার ধামসোনা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী আবুল হোসেন ভুঁইয়ার। সেই পোস্টার দেখেই নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার পাশে।
ঘটনাস্থল সরেজমিনে চিহ্নিত করতে শনিবার সকালে আশুলিয়া থানার সামনে যান স্থানীয় সাংবাদিকরা। সেখানে দেখা যায়, আশুলিয়া প্রেসক্লাবের পেছনের সড়ক দিয়ে থানা রোড অতিক্রম করে এসবি অফিসের দিকে যাওয়ার সময় ডান পাশের দেয়ালটি হুবহু ভিডিওতে দেখা ঘটনাস্থলের সঙ্গে মিলে যায়। পোস্টারটি এখনো দেয়ালে সাঁটানো রয়েছে।
স্থানীয় দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সকাল থেকেই আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল মোড় এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। দুপুরের দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবর পেয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানার চারপাশ ঘিরে ফেলে।
দোকানদার আরও বলেন, এ সময় থানার পুলিশ মসজিদের মাইক ও হ্যান্ডমাইক দিয়ে আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয়। আন্দোলনকারীরা থানার দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশ চারদিকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে কেউ মুখ খোলেননি।
এদিকে ভিডিওটির ৩৯ সেকেন্ডে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিহিত ও হেলমেট হাতে একজন পুলিশ সদস্যকে মরদেহভর্তি ভ্যানের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। তার সঙ্গে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আরাফাতের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশ পরিদর্শক আরাফাতের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আজ সকালে আমি ভিডিওটি দেখেছি। এটি অ্যানালাইসিস করা হচ্ছে।’ গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে কোনো তথ্য বা সূত্র এলে তা দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান তিনি।