যশোর প্রতিনিধি: সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিতে বেনাপোল বন্দর ভিত্তিক একটি বহিরাগত শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। বেনাপোল বন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এ সিন্ডিকেটটি।
ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় গড়ে ওঠা রানা নামে এক চোরাচালানীর নিয়ন্ত্রণে বেনাপোল বন্দরের আশপাশে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত প্রভাবশালী এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় থেকে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির বেশ কয়েকটি ঘটনা কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।
সিন্ডিকেটটি ভারত থেকে আমদানিকৃত বৈধ পণ্যের ভারতীয় ট্রাকে অবৈধ পণ্য তুলে দিচ্ছে। যার কোন বৈধ কাগজপত্র থাকছে না। পরে অবৈধ পণ্যগুলো বন্দরের বিভিন্ন শেডে কৌশলে আনলোড করে রাতের আধারে বন্দর থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এভাবে মাদক দ্রব্য, শাড়ি, থ্রি পিস, ওষুধ, প্রসাধনসামগ্রীসহ বিভিন্ন উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য বৈধ পণ্যের ট্রাকে করে এনে পাচার করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সিন্ডিকেটের সাথে বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা সরাসারি জড়িত বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন।
বৈধ পণ্যের সাথে আনা এসব অবৈধ পণ্যের বিষয়ে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা কিছুই জানেন না। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সিএন্ডএফ এজেন্টকে দায়ী করে তাদের লাইসেন্স বাতিল করছেন। ফলে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারাও এ ধরনের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি করেছেন।
গত ১৫ এপ্রিল ভারত থেকে শিল্প কলকারখানার কাঁচামালের একটি ভারতীয় ট্রাকে মদ, শাড়ি, থ্রি পিস, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন পণ্য তুলে দেয়া হয়। পরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গোপন সংবাদ পেয়ে ডাব্লুই বি-২০-১৮৯০ নাম্বারের ট্রাকটি আটক করে। দায়ী করা হয় সিএন্ডএফ এজেন্টকে।
গত ২৭ জুলাই এয়ার এন্টারপ্রাইজ নামে একজন আমদানিকারক ভারত থেকে ৩০০ কার্টুন ব্লিন্ডার আমদানি করেন। রানা সিন্ডিকেটের সদস্যরা ওপার থেকে ভারতীয় ট্রাক ডাব্লুই-বি-৮৭-১০৮৮ তে ২৭ কার্টুন শাড়ি, থ্রীপিচ, ওষুধ ও প্রসাধনসমগ্রী তুলে দেয়। গোপন সংবাদ পেয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ট্রাকটি বন্দরে ঢোকার সময় আটক করে। পরে ট্রাকটি তল্লাশি করে তার মধ্যে ২৭ কার্টুন অবৈধ পণ্য জব্দ করে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক সিএন্ডএফ এজেন্ট আনোয়ার এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্সটি সাময়িক বাতিল করেন। যদিও সিএন্ডএফ এজেন্ট এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিলো না। প্রতিটি আটকের ঘটনায় কৌশলে পালিয়ে যায় ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার।
ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্টিজের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র বেনাপোল বন্দরকে ঘিরে চোরাচালান ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এদের কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা। আমরা এই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে জানিয়েছি।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, সিন্ডিকেটের সাথে আমাদের কোনো কর্মকর্তা জড়িত কিনা আমার জানা নেই। তবে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান রহমান জানান, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বৈধ মালের সাথে যেসব অবৈধ মালামাল আমরা আটক করেছি, তা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ভারতীয় কাস্টমসের সাথে মিটিং করে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷