দেশরক্ষা করতে গিয়ে আমার নিরস্ত্র ছেলেকে ঘাতকরা হত্যা করেছে

ফেনী প্রতিনিধি: হঠাৎ খবর আসে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মহিপাল কলেজের সামনে পড়ে আছেন মাসুদ। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেকের বাজারে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ফের হামলা করেন। এসময় তাদের পা ধরে কান্নাকাটি করেও রেহাই মেলেনি মাসুদের। শেষপর্যন্ত তাকে আর বাঁচানো যায়নি।

শুক্রবার বিকালে নিহত মাসুদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন আর বুক চাপড়িয়ে কাঁদছেন।
ফেনীতে ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন মো. সরোয়ার জাহান মাসুদ। ৪ আগস্টও মিছিলে ছিলেন ২২ বছর বয়সী এই তরুণ। সেদিন শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা চালায়। নিহত মাসুদ দাগনভূঞার উত্তর জায়লস্কর গ্রামের মীর বাড়ির প্রবাসী মো. শাহাজাহান টিপুর বড় ছেলে। তিনি ফেনী সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

মাসুদের বাবা আহাজারি করে বলেন, ‘দেশ কি মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। একটি স্বাধীন জাতির নিরাপত্তাহীন জীবন কাম্য নয়। আমার মাসুদকে আল্লাহ শহীদি মর্যাদা দিয়ে জান্নাত দিন। ছেলে তো পাবো না। আমার ছেলেসহ হাজার হাজার ছেলের রক্তের বিনিময়ে যেন শান্তি আসে এই আশা করছি।

এদিকে মাসুদের মা বিবি কুলসুমের কান্না কোনোভাবেই থামছে না। মায়ের এমন আহাজারিতে স্বজনসহ প্রতিবেশীরাও চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না।

মাসুদের মা কান্না করে বলছিলেন, ‘কেন আঁর (আমার) মাসুদরে হত্যা কইরলো (করলো) তারা। দেশকি হেরাউনের (ফেরআউন) দেশ ছিল।’ এ সময় ছেলের ছবি মোবাইলে দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।

নিহত মাসুদের মেজো ভাই দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আল সামির বলেন, ‘ঘটনার দিন আমিও মিছিলে ছিলাম। ভাই ঢাকা থেকে বাড়ি এসেই মিছিলে শামিল হন। আমরা কাছাকাছি থাকলেও হামলার সময় আলাদা হয়ে যাই। এর কিছুক্ষণ পর আমাকে একজন কল দিয়ে জানান, ভাই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মহিপাল কলেজের সামনে আছে। পরে আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে নিতে চাইলে বেকের বাজারে সরকার দলীয় ক্যাডাররা আমাদের আটকে রাখে। এ সময় ভাইকে বাঁচাতে আমি তাদের পা ধরে কান্নাকাটি করি। কিন্তু তারা আমাকে লাথি ও কিল-ঘুষি মারে। এমন পাশবিকতা, বর্বরতা ও নির্মমতা মানুষ করতে পারে ভাবতে গা শিউরে ওঠে।’

মাসুদের সহপাঠীরা বলেন, মাসুদকে আমরা হাসপাতালে আনার সময় দাগনভূঞার বেকের বাজারে পথরোধ করেন ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা। সেখানে ৩০-৪০ নেতাকর্মী আমাদের বহনকরা সিএনজি যেতে দিচ্ছিলো না। পরে কোনো রকম তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মাসুদের বাবা মো. শাহাজাহান বলেন, দেশরক্ষা করতে গিয়ে আমার নিরস্ত্র ছেলেকে ঘাতকরা হত্যা করেছে। ফেনীতে ছাত্রদের ওপর গুলি করা হয়েছে। আমি চাই আমাদের দেশে এমন পরিস্থিতি আর না আসুক।