প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে বুড়িমারী-ঢাকা রুটে যাত্রা শুরু ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ট্রেন

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: বাস্তবে রূপ পেল উত্তরাঞ্চলবাসীকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি। বুড়িমারী-ঢাকা রুটে যাত্রা শুরু করেছে ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেন।

মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ট্রেনটি গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করে। এ সময় উচ্ছ্বসিত ছিলেন গাইবান্ধার যাত্রীরা।

স্টেশনে নির্ধারিত সময় অপেক্ষার পর যাত্রীদের নিয়ে ট্রেনটি আবারও ছেড়ে যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে। এর আগে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে লালমনিরহাট স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত এই ট্রেনটি।

ওই দিন দুপুরে ফিতা কেটে ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন।

এ সময় লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান এবং রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম, পশ্চিমাঞ্চল রাজশাহী) অসীম কুমার তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিরহাট জেলার তিনবিঘা করিডোর, দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা পরিদর্শনে এসে বুড়িমারী থেকে ঢাকার সঙ্গে সহজে এবং সরাসরি যোগাযোগে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৮ সালের ১৬ জুন এই রুটের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে লালমনিরহাট বুড়িমারী রেলপথ পরিদর্শনে আসেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। এরপর ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর আবারও সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন লালমনিরহাট স্টেশন পরিদর্শনে এসে ট্রেনটি চালুর আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়েও।

হতাশ হয়ে উত্তরাঞ্চলের বিশেষ করে গাইবান্ধা-লালমনিরহাট জেলাবাসী আন্দোলনে নামেন। ট্রেনটি চালুর দাবিতে সর্বশেষ গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে ‘গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ’।

এরপর ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটির জন্য ১৪টি কোচ লালমনিরহাট স্টেশনে আসার পর ৬ ডিসেম্বর ওই স্টেশন থেকেই গাইবান্ধা স্টেশন পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করে বুড়িমারী এক্সপ্রেস।

এদিকে কাঙ্ক্ষিত এই ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেনের উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারিত ছিল গত বছরের ৩০ নভেম্বর। পরে সেটি পরিবর্তন করে ৬ ডিসেম্বর এবং পরে ১৬ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। সেদিনও উদ্বোধন করা যায়নি এই ট্রেন। এরপর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি, এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হলেও সেদিনও উদ্বোধন হয়নি এই ট্রেনটি। অবশেষে গত ৯ মার্চ শনিবার রিপোর্টাস ফর রেল অ্যান্ড রোড (আরআরআর) রেল ভবনে আয়োজিত রেলওয়ের পরিচালন ও উন্নয়ন বিষয়ক এক কর্মশালায় সব ঠিকঠাক থাকলে ১২ মার্চ মঙ্গলবার ট্রেনটি চালুর কথা জানায়। ওই দিন থেকেই নতুন এই ট্রেনের টিকিটও বিক্রি শুরু করে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। আর ট্রেনটি গাইবান্ধার ওপর দিয়ে চলাচলের এমন খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেন সবাই।

রেলের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন বুড়িমারী এক্সপ্রেস ৮০৯/৮১০ নম্বর ট্রেনটি একটি ‘খ’ শ্রেণির আন্তঃনগর ট্রেন। ১৪টি কোচের এই ট্রেনের মোট আসন সংখ্যা ৬৫৩টি। ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা বুড়িমারী-৮০৯ নম্বর ট্রেনটি যাত্রা বিরতি করবে-ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন, ঈশ্বরদী বাইপাস, নাটোর, সান্তাহার, বগুড়া, বোনারপাড়া, গাইবান্ধা, কাউনিয়া, লালমনিরহাট, তুষভান্ডার, হাতিবান্ধা, বড়খাতা ও পাটগ্রাম রেল স্টেশনে। অন্যদিকে বুড়িমারী থেকে ছেড়ে যাওয়া-৮১০ নম্বর ট্রেনটি পাটগ্রাম স্টেশন বড়খাতা, হাতিবান্ধা, তুষভান্ডার, লালমনিরহাট, কাউনিয়া, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়া, সান্তাহার, নাটোর ও ঢাকা বিমানবন্দর রেল স্টেশনে।

এর মধ্যে ট্রেনটি ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় ছেড়ে এসে গাইবান্ধার বোনারপাড়ায় প্রবেশ করবে বিকেল ৪ টা নাগাদ। এছাড়া গাইবান্ধা রেল স্টেশনে ৪টা ২৪ মিনিট এবং লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে। তবে, লালমনিরহাট-বুড়িমারী পর্যন্ত আপাতত একটি শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে।

অপরদিকে লালমনিরহাট স্টেশন থেকে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ছেড়ে এসে বুড়িমারী এক্সপ্রেস গাইবান্ধা স্টেশনে পৌঁছাবে পৌনে ১১টায় এবং ১২টা ১০ মিনিট নাগাদ বোনারপাড়া অতিক্রম করে ঢাকায় পৌঁছাবে সকাল ৭টায়।
এছাড়া বুড়িমারী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে সোমবার এবং বুড়িমারী-লালমনিরহাট থেকে এটি সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে মঙ্গলবার। গাইবান্ধা থেকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগে ‘আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস’ ও ‘আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস’ নামের দুইটি ট্রেন সপ্তাহে ছয়দিন চলাচল করছে।
গাইবান্ধা রেল স্টেশনের স্টেশনমাস্টার আবুল কাশেম বলেন, এই রুটে ট্রেনটি চালু হওয়ায় যাত্রীদের মাঝে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যাত্রীদের অনেকটাই দুর্ভোগ লাঘব হবে।