র‍্যাবের হাতে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ গ্রেপ্তার জিসান

ঢাকা অফিস: খুব অল্প সময়ে বড়লোক হওয়ার লালসায় জাল নোট তৈরি করে বাজারে বিক্রি করার মিশনে নামেন যাত্রাবাড়ীর জিসান। ইউটিউব থেকে জাল টাকা তৈরির প্রশিক্ষন নিয়ে শুরু হয় ব্যবসা। এরই মধ্যে দুই কোটি টাকা মূল্যের জাল নোট ইতোমধ্যে জিসান বাজারে বিক্রি করেছেন। নিজের এই অপকর্ম গোপন রাখতে জাল নোট তৈরির পর অবশিষ্ট সকল কাগজ পুড়িয়ে ফেলা হত। তবুও তার শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে র‍্যাবের হাতে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন জিসান।

রাজধানীর কদমতলী এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ মো. জিসান হোসেন রিফাতকে (১৯) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১০।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টায় র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর কদমতলী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে ২লাখ ৩০ হাজার ৯০০ টাকার মূল্যমানের জাল নোট (যার মধ্যে ১০০০, ৫০০, ১০০, ৫০, ২০ ও ১০ টাকা সমমানের জাল নোট), ১টি মনিটর, ১টি সিপিইউ, ১টি কালার প্রিন্টার, ৪টি হার্ডডিক্স, ১টি মাউজ, ১টি কী-বোর্ড, ৪টি ক্যাবল, ২টি স্কিন প্রিন্টিং ফ্রেম, ১টি জাল টাকা কাটার কাঠের বোর্ড, ৮টি এন্টি কার্টার বেøড, ১টি কাচি, ২টি ফেবিকল আঠা ও জাল টাকা তৈরির কাজে ব্যাবহৃত ২৬৪ পিস সাদা কাগজ সহ জালনোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।

 

র‍্যাব জানায়, জিসান টেলিগ্রাম অ্যাপস, ইউটিউব ও গুগলসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমের সাহায্যে জাল টাকা তৈরির সার্বিক দক্ষতা অর্জন করেন। এরপর কম সময়ে অল্প পুঁজিতে অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে জাল টাকা প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করেন। পরবর্তীতে সে জাল টাকা তৈরির প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ক্রয় করেন এবং জাল টাকা সরবরাহের জন্য জাল টাকা তৈরি ও সরবরাহকারী বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেইজ ও গ্রুপে সংযুক্ত হন। একটি সংঘবদ্ধ চক্র টেলিগ্রাম অ্যাপস ব্যাবহার করে জাল টাকা তৈরির প্রযুক্তি আদান প্রদান করে এবং জাল টাকা বিক্রির জন্য নেটওয়ার্ক হিসেবে ব্যাবহার করে। জিসান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলে এবং সেখানে সে জাল নোট তৈরি-সরবরাহ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করে অভিনব কায়দায় জাল নোটগুলো বিক্রয় করতেন।

সে তার ফেইসবুক গ্রুপ থেকে কমেন্ট দেখে তাদের সঙ্গে মেসেঞ্জারে চ্যাটিং এর মাধ্যমে ক্লায়েন্ট তৈরি করে অগ্রীম টাকা নিয়ে নিত এবং পরবর্তীতে তাদের সুবিধাজনক স্থানে জাল নোটগুলো সরবরাহ করতেন।

র‍্যাব আরও জানায়, জিসান চক্রের সদস্যরা রাজধানী ঢাকার কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, ডেমরা এবং নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরিকৃত জাল নোট সরবরাহ করতেন। এই চক্র প্রতি ১ লক্ষ টাকা মূল্যের জাল নোট ১০-১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত। জাল টাকা সরবরাহকারী চক্রটি মাছ বাজার, লঞ্চ ঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন মার্কেটে নানান কৌশল অবলম্বন করে জাল নোট সরবরাহ করে আসছিল।

এছাড়াও জিসান অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠান বিশেষ করে বিভিন্ন মেলা, উৎসব, পূজা ও কোরবানির পশুর হাট উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ জাল নোট ছাপিয়ে ছিলেন বলে তথ্য প্রদান করেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জালনোট প্রিন্টিং এর সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয় ফেলত। এ পর্যন্ত জিসান বিভিন্ন সময়ে প্রায় ২ কোটি মূল্যমানের জাল নোটের ব্যবসা করেছে বলে জানা যায়।