কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত যশোরের যুবদল নেতা ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে

যশোর প্রতিনিধি: কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত যশোরের যুবদল নেতা আমিনুর রহমান মধুকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, হাসপাতালে। এছাড়া তার পরিপূর্ণ চিকিৎসায়ও বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এমন অমানবিক কান্ডে মর্মাহত তার পরিবার ও স্বজনরা। এমনটি সমিচীন নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন আইনজীবীরা।

আমিনুর রহমান মধু যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি। তিনি সদর উপজেলার আমদাবাদ ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক। একই সংগঠনের যশোর জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট যশোর জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। নিজ এলাকা ও যশোর শহরে এক জন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিসরে পরিচিত। ছাত্রজীবন থেকে ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের রাজনীতি করার কারণে সকল রাজনৈতিক দলের কাছে তিনি প্রিয়ভাজন ব্যক্তি। কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির কৌশলের কথিত নাশকতা মামলায় তিনিও রক্ষা পাননি।
দলীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২ নভেম্বর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের আমদাবাদ গ্রাম থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর ১২ নভেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় আমিনুর রহমান মধু হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কারাগার থেকে তার দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি হাতকড়া লাগিয়ে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই রাতেই তাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন ১৩ নভেম্বর কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে ও ডান হাতে হাতকড়া লাগানো অস্থায় হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। আবার ওই হাতে একগুচ্ছ দড়ি পেচানো ছিল। তার শরীরে ডান্ডাবেড়ি এবং হাতকড়া এমনভাবে লাগানো যাতে সামান্য নড়েচড়ে বসারও কোন সুযোগ নেই। কেবলমাত্র দুই হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া। চিকিৎধীন থাকা অবস্থায় পুলিশের আপত্তির মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে বিছানা পর্যন্ত দেয়নি। যে কারণে আমিনুর রহমান মধুকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা করা হয়। তার বাম হাতে ক্যানোলা লাগানো।
তাকে এনজিও গ্রাম করার কথা বলেছিল, এজন্যে তাকে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই গত শনিবার রাতে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে জোর করে হাসপাতাল থেকে কারাগারে নিয়ে গেছে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতে আইনের শাসন ও মানবাধিকার কতটুকু পর্যদুস্ত হতে পারে, আমিনুর রহমান মধুকে জামিন না দেয়া ও চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার ঘটনা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। তাই সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের উচিত, অবিলম্বে রাজপথে নেমে এসে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই অবৈধ কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটানো।
বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইবাদত খান বলেন, বাংলাদেশে আইন কাগজ কলমে আছে, বাস্তবে নেই। আমিনুর রহমান মধু যে রোগে অসুস্থ তাতে যে কোন সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তার ওপর একজন শিক্ষককে এমন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে রাখা দেশ ও জাতির জন্যে খুবই লজ্জাজনক। তার স্ত্রী- সন্তান অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই আমি আশা করবো আদালত তাকে জামিন দিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ করে দেবে।
এ বিষয় যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, বিষয়টা খুবই আমনবিক। একজন হৃদরোগ আক্রান্ত ব্যক্তিকে এভাবে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রেখে চিকিৎসা দেয়া মোটেও সমীচীন নয়। আইন আদালত- মানুষের কল্যাণের জন্যে অকল্যাণের জন্যে নয়।
আমিনুর রহমান মধুর স্ত্রী নাহিদা সুলতানা লাবনী বলেন, পরিবারের অভিভাবক গুরুতর অসুস্থ হয়ে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমি আমার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায় তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। তার ওপর কত অমানবিকভাবে দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতে হাতকড়া পরিয়ে রেখেছে।
প্রসঙ্গত যে, চলতি বছরের শুরুতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়ার অপব্যবহার রোধ করতে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও কারা মহাপরিদর্শক বরাবর আইনি নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশে বলা হয়,যদি কোনো শক্তিশালী বন্দী সহিংস অপরাধে অভিযুক্ত হন বা কুখ্যাত হিসেবে পূর্বপরিচিত হন বা অসুবিধা সৃষ্টিতে উন্মুখ থাকেন বা রাস্তা দীর্ঘ হয় বা বন্দীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে হাতকড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। হাতকড়া না থাকলে দড়ি বা কাপড় ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। প্রবিধানের কোথাও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের কথা নেই। মূলত ডান্ডাবেড়ির ব্যবহার কেবল জেলকোড ও কারা আইনের আওতাধীন। বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশন অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কেবল হাতকড়া ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, ডান্ডাবেড়ি নয়।