এইচএসসিতে যশোর বোর্ডে ভয়াবহ ফল বিপর্যয়

যশোর প্রতিনিধি: এইচএসসিতে যশোর শিক্ষাবোর্ডে ভয়াবহ ফল বিপর্যয় ঘটেছে। গত বছরের তুলনায় পাশের হার কমেছে ১৪ শতাংশ। জিপিএ কমেছে সাড়ে ১০ হাজারের অধিক। কমেছে শতভাগ পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। সেইসাথে বেড়েছে শূণ্য পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গতকাল রোববার বিকালে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পক্ষে ফলাফল প্রকাশ সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ^াস শাহীন আহম্মদ জানান, উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে গড় পাশের হার ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮ হাজার ১২৩জন। গত বছরের থেকে এ বছর পাশের হার কমছে ১৪ শতাংশ। গত বছর গড় পাশের হার ছিলো ৮৩.৯৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিলো ১৮ হাজার ৭০৩ জন শিক্ষার্থী।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় ২০২০ সালে অটোপাশের কারনে শতভাগ শিক্ষার্থীকে পাশ দেখানো হয়। ২০২১ সালে সীমিত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণ করলে পাশের হার দাঁড়ায় ৯৮ দশমিক ১১ শতাংশ। শতভাগ শিক্ষার্থী পাশের প্রতিষ্ঠান ছিলো ১১৬ টি। ২০২২ সালে পরীক্ষায় গড় পাশের হার ছিলো ৮৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। শতভাগ শিক্ষার্থী পাশের প্রতিষ্ঠান ছিলো ৩৯ টি। শূণ্য পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো ৬ টি।
এ বছর গড় পাশের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। জিপিএ -৫ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১শ ২৩ জনে। গত বছর এই সংখ্যা ছিলো ১৮ হাজার ৭শ ৩ জন। অর্থাৎ জিপিএ কমেছে ১০ হাজার ৫শ ৮০ জন। শতভাগ পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৯ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১০এ। সেইসাথে শূণ্য পাশের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬ থেকে ৭ এ উন্নীত হয়েছে।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ^াস শাহীন আহম্মদ বলেন, ২০১৯ সালে পাশের হার ছিল ৭৫ শতাংশ। এরপর করোনা মহামারীসহ বিভিন্ন দূর্যোগের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। যে কারণে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে সেইভাবে প্রস্তুত করতে পারেনি। তাছাড়া , ইংরেজি ও উচ্চতর গণিতের প্রশ্ন কঠিন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ হয়েছে। এ দুটি বিষয়ের পাশের হার কম হওয়ায় বোর্ডের গড় পাশের হারের উপরে প্রভাব পড়েছে।
ধারাবাহিক ফল বিপর্যয়ের বিষয়টি সামনে আনা হলেও এ বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দেননি। তিনি বলেন, আমাদের কাজ পরীক্ষা গ্রহণ করা। ফলাফল ভালো বা খারাপ হবে তা শিক্ষার্থীদের উপর নির্ভর করে। তবে আমরা করোনার পূর্ববর্তী সময়ের কাছাকাছি ফলাফল অর্জন করেছি।
করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের উপর বিশেষ নজর রাখার প্রয়োজনীয়তা ছিলো কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে সবসময় সমন্বয় করে কাজ করেছি। আমাদের পক্ষ থেকে তেমন কোন গাফিলতি ছিলো না। তাছাড়া এবছর যশোর বোর্ডের শিক্ষকদের প্রস্তুতকৃত প্রশ্নের পরিবর্তে অন্য বোর্ডের প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণ হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীরা কিছুটা চাপ অনুভব করেছে। ফলে তারও একটি প্রভাব ফলাফলের উপর পড়েছে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের তথ্য মতে, চলতি বছর খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৫৭৫টি কলেজ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার ৩৫৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ৯ হাজার ৬৩৪ পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ছেলে পরীক্ষার্থী ৫৪ হাজার ৮৭৬জন ও মেয়ে পরীক্ষার্থী ৫৪ হাজার ৭৫৮ জন। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ১৮ হাজার ৫৮৬ জন, মানবিক বিভাগের ৭৬ হাজার ৫৮৬জন ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী ১৪ হাজার ৪৬২ জন।
এদিকে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, দুই বছরের পরিবর্তে প্রস্তুতির জন্য মাত্র দেড় বছর সময় পাওয়ায় পরীক্ষা নিয়ে বেশ চাপে ছিলো তারা। তবে আজ আশানুরূপ ফল পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে কৃতকার্য শিক্ষার্থীরা।
ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন বলেন, আমাদের পরীক্ষার্থী ছিলো ৫৮৪ জন। পাশ করেছে ৪৫৮ জন। পাশের হার ৮৯ শতাংশ। আমাদের সার্বিক ফলাফলে আমরা সন্তষ্ট। যদিও বোর্ডের পাশের হার এবছর খুবই কম। এটা আমাদের প্রত্যাশিত ছিলো না। ছেলে মেয়েরা প্রস্তুতির সময় কম পেয়েছে। যার কারনে বোর্ডের পাশের হার কমে গেছে।
একই কথা বলেন, যশোর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অমল কুমার বিশ^াস বলেন, আমাদের কলেজ ভালো রেজাল্ট করেছে। গতবারের থেকেও আমাদের রেজাল্ট ভালো।