যশোরে প্রধান শিক্ষককে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

যশোর প্রতিনিধি
নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ করে না দেওয়া ও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যশোরে এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দেড় ঘন্টা ধরে শারিরীক ভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে এক উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে চেয়ারম্যানের বাড়িতে ডেকে নিয়ে এই নির্যাতন করা হয়। অভিযুক্ত মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ভুক্তভোগী মোহাম্মদ নুরুল আমিন যশোর আদর্শ বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এর আগে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন তিনি। ঘটনাটি জানাজানি হলে বর্তমানে ভয়ে তিনি বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। এছাড়া ওই বিদ্যালয়টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসেন টিপু উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্যাডারদের ভয়ে স্কুলে যেতে পারছেন না।
জানা যায়, আগামি ডিসেম্বরে যশোর আদর্শ বহুমুখী বলিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। নিয়ম অনুযায়ি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টির কয়েক শ’ গজ দূরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ চৌধুরীর বাড়ি।
ফলে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে চান ফরিদ চৌধুরী। কিন্তু ফরিদ চৌধুরীকে সভাপতির পদ নিশ্চিত না করে নির্বাচন করার উদ্যোগ নেয়ায় ক্ষিপ্ত হন তিনি। এজন্য প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার ফোন করে ও ক্যাডার পাঠিয়ে গালাগালি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, বিদ্যালয়ে সম্প্রতি তিনজন কর্মচারি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি তাদের নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু নিয়োগের আগেই উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার ফোন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য বলেন। পরবর্তীতে নিয়োগ হয়ে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান ফোন করে প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ প্রাপ্তদের তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু কর্মচারিরা না যাওয়ায় মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী প্রধান শিক্ষকের উপর ক্ষিপ্ত হন। তিনি একাধিকবার ফোন করে হুমকি দেয়ার পাশাপাশি তার ক্যাডারদের স্কুলে পাঠিয়ে প্রধান শিক্ষককে হুমকি দেন। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে বুধবার ৮ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে প্রধান শিক্ষক উপজেলা চেয়ারম্যানের  বাসভবনে যান। প্রধান শিক্ষক সেখানে গেলে তার দোতলার বাসভবনে নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তাকে গালিগালাজ করেন। পরে তার নিচে অফিসে বসে থাকা ক্যাডারদের উপরে ফোন করে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করতে নির্দেশ দেন। মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী উপস্থিতিতে ওই ক্যাডাররা দেড় ঘন্টারও বেশি সময় ধরে প্রধান শিক্ষককে নির্যাতন করে। তারা প্রধান শিক্ষকের গোপানঙ্গ টিপে ধরে। মাথা, ঘাড়, মুখসহ বিভিন্ন স্থানে কিল, ঘুষি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় আছি। শিক্ষকতা জীবনে আমি কোন অন্যায় করিনি। নিষ্টার সাথে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। আর এই বয়সে এসে আমি একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এমন নির্যাতনের শিকার হবো, তা কখনো কল্পনাও করিনি। আমার বিচার চাওয়ার ভাষা নেই। হত্যার হুমকির হুলিয়া নিয়ে দিন পার করছি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কারো কাছে বিচার চাইতেও পারছি না। আমি প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে ন্যায় বিচার কামনা করছি।’
এই বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর মুঠোফোনে কয়েক দফা ফোন করেও তিনি রিসিভ করেননি। আর যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহসান হাবিব বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিনকে দেড় ঘন্টা ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্যাতন চালিয়েছেন। ঘটনাটি আমি প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে শুনেছি। বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয়।’ যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।