যশোর স্বাধীনতার উন্মুক্ত মঞ্চে একক বক্তা এক আলোচনা সভা

যশোর প্রতিনিধি
স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে ও গণহত্যার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বিকেলে যশোর মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দানের (টাউন হল মাঠে) স্বাধীনতার উন্মুক্ত মঞ্চে একক বক্তা হিসেবে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে একক বক্তৃতা করেন বিশিষ্ঠ লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক বেনজিন খান। একক বক্তৃতায় গবেষক বেনজিন খান ওসমানিয়া শাষন ব্যবস্থা বা অটোম্যান সাম্রাজ্য উচ্ছেদ এবং ১৯১৭ সাল থেকে ১৯৪৭ এবং বর্তমান সময়ের ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থেকে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলার যে কৌশল দৃশ্যমান সে সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
বেনজিন খান, তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, ফিলিস্তিনী জনগণের স্বাধীনতার সংগ্রাম নিয়ে পৃথিবীর মানুষের মধ্যে একধরনের অস্পষ্ট ধারনা বিদ্যমান। পশ্চিমাদের সহায়তায় ইহুদি ইসরাইল ও তার মিত্ররা ফিস্তিনিদের এই স্বাধীনতা সংগ্রামকে সন্ত্রাসী আগ্রাসন বলে অভিহিত করছে। আর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দখলদার বাহিনী ইসরাইলের আক্রমনকে তাদের আত্মরক্ষায় ন্যায় সংগত অধিকার বলে চালিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এটা একটা ভ্রান্ত ধারনা মাত্র। প্রকৃতপক্ষে ফিলিস্তিনরা করছে স্বাধীনতা সংগ্রাম আর ইসরাইল হচ্ছে দখলদার। সেই দখলদাররা আজ স্বাধীন ফিলিস্তিনীদের তাদের জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ করছে। কিন্তু এটা হতে পারে না। এই বিষয়টি আজকে বিশ্বব্যাপী পরিস্কার হতে হবে। কে স্বাধীনতা সংগ্রামী আর কে দখলদারিত্ব করছে।
তিনি বলেন, স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠনকে কেন্দ্র করে আজ বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ ইনসাফের পক্ষে আর অপর অংশটি দখলদারের পক্ষে। এখন আপনাকে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি ইনসাফের পক্ষে থাকবো না দখলদারের পক্ষে ? আর এর মধ্য দিয়ে গোটা সভ্য জাতি আজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন বিশ্ব মোড়লরা যে মুখোশধারী ছিল সেটা সম্প্রতি হামাসের বীরযোদ্ধারা তাদের হামলার মাধ্যমে তা প্রমান করে দিয়েছে। তারা সারা পৃথিবীতে মানবতার কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে, শিশু ও নারী অধিকার নিয়ে কথা বলে- আসলে এসবই হচ্ছে তাদের স্বার্থের পক্ষে। আজ যখন ফিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের সৈন্যরা বর্বরতার সব স্তর অতিক্রম করছে তখনও ওই পশ্চিমা মুখোশধারীরা ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা সংগ্রাকে সন্ত্রাসী আগ্রাসন বলে অবিহিত করছে। ফলে আজ সময় এসেছে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করার। আমরা কি নির্যাতিতদের পক্ষে না নির্যাতনকারীর পক্ষে অবস্থান নেব তা পরিস্কার করতে হবে।বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ তাদের মিত্ররা আজ প্রমান করেছে তারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে। ফলে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মুক্তচিন্তা,মানবাধিকার, নারী ও শিশু অধিকার এসবই হচ্ছে তাদের মুখের কথা।
তিনি আরো বলেন, আজ ফিস্তিনিদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুধু মাত্র তাদের একার লড়াই না। আজ এই সংগ্রাম সারা পৃথিবীর নির্যাতিত বঞ্চিত মজলুমদের সংগ্রাম। একদিকে শোষক আর একদিকে শোষিত মানুষের সংগ্রামে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। আজ ফিলিস্তিনি জনগণ যে সংগ্রাম করছে সেটা আজ শুধু তাদের একার সংগ্রাম নয়, এটা সারা পৃথিবীর মজলুম জনগণের সংগ্রাম। ফিলিস্তিনিদের এই স্বাধীনতার সংগ্রামের ওপর নির্ভর করছে পৃথিবীর মজলুমরা আর স্বাধীন থাকবে কি থাকবে না। তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করতে পারবে কি পারবে না।এই সংগ্রামের ওপর নির্ভর করছে পৃথিবীর নিপিড়ীত, নির্যাতিত, দুর্বল মানুষের, মজলুম মানুষের মুক্তির আন্দোলন। সুতারাং এটা এখন আর কেবলমাত্র ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম নয় আজ এটা সারা পৃথিবীর নিপীড়িত, নির্যাতিত, মজলুম, বঞ্চিত মানুষের সংগ্রাম। এই সংগ্রামে আমাদের অংশ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে পৃথিবীর কোন স্বৈরশাষক, অত্যাচারী শাষক, একনায়কতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। জনগণের আন্দোলনের মুখে তাদেরকে বিদায় নিতে হয় বা হয়েছে বা হবে। আজকে সারা পৃথিবীতে যারা ফ্যাসিবাদের জন্ম দিচ্ছে সময় এসছে নিপিড়িত, নির্যাতিত, বঞ্চিত মজলুম জণগণকে গর্জে ওঠার। জয় আমাদের হবেই। তিনি এই মুক্তির সংগ্রামে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে অংশগ্রহনের আহবান জানান।