কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না অভয়নগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ-দুর্নীতির রাণি মঞ্জুয়ারার চাহিদা

যশোর প্রতিনিধি
কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না অভয়নগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ-দুর্নীতি। অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারা খাতুন দিনের পর দিন অসাধু দলিল লেখকদের যোগসাজশে নামমাত্র কাগজপত্র দাখিল করে মোটা অঙ্কের ঘুষের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রির কাজ চালাচ্ছেন। এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করা যায় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এখানে স্থায়ী কোনো সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় তার ইচ্ছামত ঘুষ আদায় করছেন। সপ্তাহে দু’দিন জেলার ঝিকরগাছা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারকে দিয়ে এখানে দলিল রেজিস্ট্রির কাজ চলছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা।
সূত্র জানায়, অভয়নগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সরকারি কোনো বিধান মানা হয় না। ইচ্ছেমতো দলিল রেজিস্ট্রি ফি আদায় করা হয়। দানপত্র বা হেবা দলিল রেজিস্ট্রি করতেও অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অফিসের সহকারী মঞ্জুয়ারা দলিল লেখকদের সহায়তায় সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছেন নানা কৌশলে। সরকার নির্ধারিত রাজস্ব ফাঁকি দিতে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে হেবা দলিল রেজিস্ট্রির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এতে করে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এর আগেও একই ভাবে ইকবাল নামে এক অফিস সহকারী জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। খাস খতিয়ানের জমি বিক্রি করতে সহায়তা করেছেন। এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর ইকবালকে অভয়নগর থেকে বদলি করা হয়। ইকবালের দেখাদেখি একই পথ অবলম্বন করেছেন মঞ্জুয়ারা। কয়েক বছর ধরে এই অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতি একের পর এক চলে আসছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা।
দলিল লেখক সমিতির সদস্যদের দাবি, যশোরের প্রতিটি উপজেলায় একজন করে স্থায়ী সাব- রেজিস্ট্রার থাকার কথা। অথচ অজ্ঞাত কারণে স্থায়ীভাবে সাব-রেজিস্ট্রার দেওয়া হচ্ছে না কোন কোন উপজেলায়।
উপজেলার বুইকারা গ্রামের বাসিন্দা জামির আলী বলেন, জমি বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠাব। এজন্য বায়না করেছি; কিন্তু এখন সাব-রেজিস্ট্রারের জটিলতায় জমি বিক্রি করতে পারছি না। এখানে মঞ্জুয়ারা নামে একজন মহিলা আছেন। তিনি নানা জটিলতা দেখাচ্ছেন। ফলে জমি বিক্রি করতে না পেরে বেকায়দায় আছি।
গাজীপুর গ্রামের সাহেব জান নামের একজন বলেন, আমার একটি জমি বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে ও নিজের চিকিৎসা নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রারের জটিলতায় জমি বিক্রি করতে পারছি না। দলিল লেখকরা জমির রেজিস্ট্রি করতে মঞ্জুয়ারা সাথে যোগাযোগ করতে বলেছে। তার কাছে গেলে তিনি ঝাড়ি দিয়েছে। তিনি দলিল লেখকদের সাথে কথা বলতে বলেছেন। এখন আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। জমি বিক্রি করতে না পারলে মেয়ের বিয়ে দিতে পারছি না। আবার বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে। এই সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে কোন সপ্তাহে একদিন অথবা দু’দিন কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ মোতাবেক আরএস রেকর্ড মূলে মালিক হলে দলিল নিবন্ধনে কোন খাজনা, নামজারি ও ডিসিআর লাগবে না। দলিল মূলে মালিক হলে শুধুমাত্র ডিসিআর ও নামজারি জমা ভাগ লাগবে। আমমোক্তার, বিনিময়, বন্টন, দানের ঘোষনা, হেবা ঘোষনা, বিলওয়াজ হেবা, অছিয়ত, ভুল সংশোধন, ঘোষনা পত্র, না দাবি ক্ষেত্রে খাজনা, নামজারি ও ডিসিআর লাগবে দলিল নিবন্ধনে এমন কোন অধ্যাদেশ জারি হয়নি। অফিস সহকারী মঞ্জুযারা দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি নিজের মনগড়া আইন তৈরি করে দলিল লেখক, দাতা ও গ্রহীতাকে চাপিয়ে দিয়েছেন। তার নিয়ম মতো কোন দলিল না হলেই তিনি দলিল নিবন্ধনে তালবাহানা শুরু করেন। তার দাবিকৃত টাকা না পেলে দলিল নিবন্ধন করেন না। পেন্সিলের মাধ্যমে সংকেত পেলেই তিনি দলিল নিবন্ধন করেন। এতে করে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে দলিল লেখক, দাতা ও গ্রহীতারা। এসব কর্মকা-ে দলিল লেখক থেকে শুরু করে দলিল দাতা ও গ্রহীতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তার অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। ফলে সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা কোন সপ্তাহে একদিন আবার কোন সপ্তাহে দু’দিন অফিস করেন। তিনি কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন বুধ ও বৃহস্পতিবার। অফিসার না থাকার কারণে রাম-রাজত্ব করে থাকেন অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারা খাতুন। কোন দলিল আগে হবে, নকল নবীশ কারা আগে পাবে- এসবের নিয়ন্ত্রণ মঞ্জুয়ারার হাতে।
দলিললেখক জানান, সাব-রেজিস্ট্রার এর নাম ভাঙিয়ে অফিসের অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারা প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চার লাখ টাকার বেশি অফিস খরচের কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারা খাতুনের কাছে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। এ কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।