মামলা তুলে নেয়ার জন্য স্ত্রী ও সন্তানকে খুন করার হুমকি বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

যশোর প্রতিনিধি: বিজিবির সদস্যকে যৌতুকের টাকা না দেয়ায় শিশুকন্যাসহ স্ত্রীকে তাড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আদালতে মামলা করে বিপাকে পড়েছে এক গৃহবধূ। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্থ গৃহবধূ সোনালী আক্তার বকুল (২৬) ৭ বছরের শিশু কন্যা নিয়ে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করে মামলা চালাচ্ছেন। এখন ওই মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয়ায় জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বকুল যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার ভবেরবেড় গ্রামের মৃত ফরিদ শেখের মেয়ে। আর অভিযুক্ত ও মামলার বিবাদী আসামি বিজিবি সদস্য নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের মৃত. আব্দুর রবের ছেলে রাজিব আহমেদ। তার সৈনিক নম্বর ৮৯০৭৯। তিনি বর্তমানে ৫২ বিজিবি সিলেটের বিয়ানী বাজারে কর্মরত আছেন।
বেনাপোল পোর্ট থানায় গত ৮ সেপ্টেম্বর দায়েরকৃত অভিযোগে সোনালী আক্তার বকুল বলেছেন,গত ৭বছর আগে সামাজিক ভাবে রাজিব আহমেদের সাথে তার বিয়ে হয়। এর মধ্যে তাদের একটি কন্যা জন্ম লাভ করে। যার বর্তমান বয়স (৭)। বিয়ের পর থেকে প্রায় যৌতুকের টাকা জন্য তাকে মারধর করেত স্বামী রাজিব আহমেদ। যৌতুকের টাকা না দেয়ায় ২ বছর পূর্বে মেয়েসহ তাকে তাড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে যশোর বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেন করেন সোনালী আক্তার বকুল। বর্তমান মামলাটি যশোর আদালতে মামলাটি চলমান রয়েছে। এর মধ্যে মামলা তুলে নেয়ার জন্য মোবাইল ফোনে বারবার হুমকি দিয়ে চলেছেন রাজিব আহমেদ। তুলে না নিলে তার একমাত্র শিশু কন্যাও তাকে খুন করে লাশ গুম করা হবে বলে মোবাইলের শাসায়। এ ঘটনায় গত ৮ ই সেপ্টেম্বর যশোর বেনাপোল পোর্ট থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমির হোসেন জানান, সোনালী আক্তার বকুল নামে একজন গৃহবধূ তার স্বামী রাজিব আহমেদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছেন অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করছি তদন্তের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সোনালী আক্তার বকুল সাংবাদিকদের জানান, তিনি তার সাত বছরের শিশু কন্যাকে নিয়ে খুব অসহায় ভাবে জীবন যাপন করছে। রাজিব আহমেদ বিভিন্ন সময় তার ব্যবহার তো ফোন দিয়ে হুমকি প্রদান করে চলেছে। এমনকি বেনাপোলে কর্মরত তার সহকর্মী বিজিবি সদস্যদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় অবৈধ পণ্য দিয়ে তাকে মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। এই কারণে তিনি বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।
 সোনালী আক্তার বকুল আরো জানান, আমি বেনাপোলে একটি ওয়ালটন শোরুমে চাকরি করতাম। আর রাজিব আহমেদ ২৩ বিজিবি খুলনায় কর্মরত ছিলেন। রাজিব আহমেদ চাকরির সুবাদে বেনাপোলের একটি বিজিবি ক্যাম্পে কর্মরত থাকাকালীন সময় এখানে তাদের মধ্যে প্রেম হয়। এরপর তাকে ওই সময় ফুসলিয়ে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার একটি কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রি বিয়ে করে। এরপর তারা স্বামী স্ত্রী হিসেবে রাজিবের নেত্রকোনার বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। এরপর যৌতুকের দাবিতে মারপিট করতে থাকে। কয়েক বছর ঘর সংসার করার পরে একটি কন্যা সন্তানের জননী হলে তাকে যৌতুকের টাকার জন্য চাপ ও মারপিট করে নির্যাতন চালিয়ে শিশুকন্যাসহ তাকে তাড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে গত২০২০ সালে রাজিবের নতুন কর্মস্থল ফেনির ৪ বিজিবি ব্যাটেলিয়ানের গেটে গিয়ে সন্তান নিয়ে হাজির হয়। এসময় সোনালী আক্তার বকুলের বয়স পূর্ন না হওয়ায় বিজিবির অনুমতি সাপেক্ষে বিজিবির অধিনায়ক রাজিব আহমেদ ও সোনালী আক্তার বকুলকে তাদের বয়স অনুযায়ী বিয়ে করার পরামর্শ দেন ও পরে কাগজপত্র অনুমতি নিয়ে তারা বিয়ে করে সেখানে সরকারি পারিবারিক বাসস্থানের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। সেখানে সরকারি পারিবারিক বাসস্থানের অনুমতির মেয়াদ শেষ হলে রাজিব আহমেদ তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় নিয়ে রেখে আসে। সেখানে রাজিব আহমেদ ছুটিতে এসে দফায় দফায় আবার তার ওপরে চালাতো নির্যাতন। শুধু বাড়িতে নয় ফেনী বিজিবির সরকারি পারিবারিক বাসস্থানেও থাকাকালীন সময়ে বকুলের ওপর চলতো অমানুষিক নির্যাতন। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে শিশুকন্যাসহ বকুলকে নির্যাতন চালিয়ে তাড়িয়ে দেয়। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সোনালী আক্তার বকুল, বিজিবির মহাপরিচালক বরাবর বিজিবি সদস্য তার স্বামী রাজীব আহমেদের নির্যাতন এর বর্ণনা দিয়ে একটি অভিযোগ করেন। কিন্তু তার কোন বিচার আজও পর্যন্ত সোনালী আক্তার বকুল পায়নি। শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না পেয়ে সোনালী আক্তার বকুল যশোর সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেনাপোল পোর্ট আমলী আদালত যশোরে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এ মামলা তুলে নেয়ার মোবাইল ফোনে রাজিব আহমেদ হুমকি দিয়ে বলেছেন, মামলা তুলে না নিলে বকুল ও তার মেয়েকে খুন করে লাশ গুম করা হবে। এ ব্যাপারে রাজিব আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।সোনালী আক্তার বকুলের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী জিএম মুছা জানান, সোনালী আক্তার বকুল খুবই অসহায় একটি মেয়ে তার বাবা নেই ।শুনেছি শিশু কন্যাকে নিয়ে পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। আমরা আশা করছি সোনালী আক্তার বকুল ন্যায় বিচার পাবেন।