যশোরের রানার সম্পাদক মুকুল হত্যাকান্ডের ২৫  বছর পরও বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ

যশোর অফিস: যশোরের দৈনিক রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুল হত্যাকান্ডের ২৫ বছর পরও বিচার পেল না পরিবার। এই দীর্ঘ সময়ে নানা জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতায় আটকে আছে মামলার বিচার কাজ। তাই বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ সাইফুল আলম মুকুলের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ।

স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ মোস্তফা রাজা জানিয়েছেন, মামলাটি দ্রুত বিচারের জন্য স্পেশাল দায়র জজ আদালতে বিচারধীন আছে। হাইকোর্টের আদেশে একজন আসামির অংশ বাদে সাক্ষী গ্রহণ শেষ হয়েছে। হাইকোর্ট পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত মামলার বিচার কার্যক্রম গ্রহণ করা যাচ্ছেনা। এ প্রতিবন্ধকতা দূর হলে মামলা সচল ও বিচারের মাধ্যমের নিস্পিত্তি করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ অবস্থার মধ্যদিয়ে আজ ৩০ আগস্ট বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে প্রয়াত সাংবাদিক মুকুলের ২৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে স্বৃতিস্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল শহর থেকে বেজপাড়ার নিজ বাসভবনে যাওয়ার পথে চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন। পরদিন নিহতের স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন অপরিচিত ব্যক্তিদের আসামি করে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন এএসপি দুলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। এক পর্যায়ে আইনি জটিলতার কারণে মামলার কার্যক্রম থমকে পড়ে। দীর্ঘদিন পর ২০০৫ সালে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ থেকে মুকুল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর সিআইডি কর্মকর্তা মওলা বক্স নতুন দু’জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দেন। ২০০৬ সালের ১৫ জুন যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (৩) এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (২) আদালতে ২২ জনকে অভিযুক্ত করে মুকুল হত্যা মামলার চার্জগঠন করা হয়। এ সময় মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ও রূপম নামে আরেক আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মুকুল হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে আসামি ইত্তেফাকের সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আবেদন করেন। হাইকোর্ট আবেদন গ্রহণ করে বিচারিক আদালতে কার্যক্রম অব্যহত রেখে আবেদনের শুনানি না হওয়ায় পর্যন্ত আজমল হোসেনের অংশের বিচারিক কার্যক্রম স্থগীত রাখার আদেশ দেয়া হয়।
২০১০ সালে মামলার ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে। হাইকোর্টে পরবর্তী আদেশ আদেশ না আসায় মামলার কার্যক্রম স্থবীর হয়ে আছে। বর্তমানে মামলাটি যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল জজ আদালতে পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় আছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ৩০ আগস্ট পালিত হচ্ছে শহীদ সাংবাদিক সাইফুল আলমের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে প্রেসক্লাব যশোর ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়র বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে শোকর‌্যালি,শহীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল।