যশোর সিআইডি দপ্তরের কর্মকর্তা পরিচয়ে জেলায় ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালনকারী নুরুল আমিন কে ?

বিশেষ প্রতিনিধি 
ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) পুলিশে এক টানা প্রায় দেড় যুগ চাকুরী করার সুবাদে কথিত ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করে নুরুল আমিন নামে এক ব্যক্তি এখন কয়েক শ’ কোটি টাকার  সম্পদের মালিক বনে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তাছাড়া, তিনি প্রায় এক যুগের অধিক যশোর সিআইডিতে কর্মরত সেজে যশোর শহরের বড় বাজার থেকে শুরু করে জেলার প্রায় একশ’ স্পট থেকে মাসে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ১৫ লাখ টাকা উৎকোচ আদায় করছে। অথচ যশোর জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার যোগদানের পর থেকে জেলার থানা,পুলিশ ক্যাম্প ও ফাঁড়ী এলাকায় গড়ে ওঠা কথিত ক্যাশিয়ারের প্রথা বন্ধ  হলেও যশোর সিআইডি দপ্তরের কথিত ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন নুরুল আমিন নামে এক কর্মকর্তা। বর্তমানে যশোর সিআইডি দপ্তরের পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন,নুরুল আমিন নামে তার কোন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য দায়িত্ব পালন করেন না। তিনি আরো বলেন,তিনি যশোর সিআইডিতে যোগদানের আগেই নুরুল আমিন নামে এক এএসআইকে এখান থেকে বদলী করা হয়েছে। বর্তমানে এএসআই নুরুল আমিন সাতক্ষীরা জেলার সিআইডিতে কর্মরত রয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
যশোর শহরের বড় বাজার ঘুরে জানাগেছে,বর্তমানে বাজার এলাকায় যে সব প্রতিষ্ঠান রয়েছেন। তার মধ্যে যারা ভারতীয় পন্য সামগ্রী বেচাকেনা করছেন তাদের কাছ থেকে শুধু মাত্র যশোর সিআইডি পুলিশের কর্মকর্তা দাবি করে এএসআই নুরুল আমিন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মাসিক মোটা অংকের উৎকোচ আদায় করছেন। বড় বাজার এলাকায় ফেন্সি মার্কেট,গার্মেন্টস ব্যবসায়ী,পলিথিন,জ¦াল,জুয়া,কাপড়,পটকাবাজী,আতশবাজি,ভারতীয় জিরা,এলাচসহ বিভিন্ন মশলা, ব্যবসায়ী,হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী,ভারতীয় পন্য আনা নেওয়া কাজে নিয়োজিত নারী,পুরুষদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক,মাসিক প্রায় ৩ লাখ টাকা উৎকোচ আদায় করছেন। বড় বাজারে নুরুল আমিন কয়েকজন ব্যবসায়ীকে সাপ্তাহিক টাকা আদায়ের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। মাসের মধ্যে প্রায় ১৫ দিন তাকে যশোর শহরের বড় বাজার এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে উৎকোচ আদায় করতে দেখা যায়। অথচ তার কর্মস্থল সাতক্ষীরা সিআইডি দপ্তরে।
সূত্রগুলো আরো জানিয়েছেন, সিআইডি যশোর দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা ও সদস্যদের ম্যানেজ করে এএসআই নুরুল আমিন অধিকাংশ রাতে মাইক্রোবাস ও মোটর সাইকেল ব্যবহার করে জেলার বিভিন্ন উপজেলার অবৈধ কারবারিদের খোঁজে ছুটে যান। জেলার বেনাপোল,শার্শা,নাভারণ, সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন অবৈধ কারবারী যা নুরুল আমিনের নজরে রয়েছে সে সব স্পটে গিয়ে অবৈধ কারবারীদের গ্রেফতারের ভয়ভীতি দেখিয়ে সাপ্তাহিত ও মাসিক আদায়ের পথ নিশ্চিত করেন। যার ফলে সিআইডি পুলিশের যশোর অফিস কর্মস্থল না হলেও এএসআই নুরুল আমিন জেলার বিভিন্ন উপজেলার সীমান্ত এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ কারবারীদের কাছ থেকে মোবাইলের বিভিন্ন বিকাশ নাম্বার ব্যবহার করে  উৎকোচ আদায় করছেন। খোদ যশোর সিআইডিতে কর্মরত নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তা ও সদস্য জানিয়েছেন, এএসআই নুরুল আমিন যশোর সিআইডিতে প্রায় ৬ বছরের অধিক সময় নেই। তাছাড়া,তিনি সিলেট বিভাগে,বাগেরহাট জেলায় ও বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা সিআইডিতে দায়িত্ব পালন করলেও যশোর সিআইডি’র কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে জেলার বিভিন্ন অবৈধ কারবারিদের কাছ থেকে মাসে প্রায় ১৫ লাখ উৎকোচ আদায় করছেন। সূত্রগুলো জানিয়েছেন,অবৈধ অর্থ দিয়ে নুরুল আমিন খুলনা লবনচরা শ^শুর বাড়ি এলাকায় বিশাল সম্পদ কিনেছেন পরিবারের অন্যদের নামে। তাছাড়া,তিনি যশোর জেলায় বিভিন্ন জমি ও ঝাঁপা বাওড় ব্যবসায়ীদের কাছে কয়েক কোটি টাকা লগ্নি করেছেন বিভিন্ন নামে। তার কাছে স্ত্রী ও বিভিন্ন নামের চুক্তি নামা স্ট্যাম্প রয়েছেন। যে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে তিনি মোটা অংকের অর্থ লগ্নি করেছেন। তাছাড়া, অবৈধ উপার্জিত অর্থ দিয়ে তিনি যে সম্পদ গড়েছেন। সেই সম্পদের মালিক বানিয়েছেন, তার আত্মীয় স্বজনের বিভিন্ন সদস্যদের নামে। যাদের নামের স্ট্যাম্প তার কাছে রয়েছেন। নুরুল আমিন কোটি কোটি টাকা সম্পদের মালিক বনে গেলেও সে যাতে দূদকের কাছে কিংবা সরকারী কোন সংস্থার কাছে ধরা পড়েন তার জন্য তিনি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি কাগজ কলমে নিজেকে একজন ঠিকাদার দাবি করেন কখনও কখনও। তিনি তার অর্থের বৈধতা দাবি করার জন্য টিন সার্টিফিকেট,আয়কর প্রদান করেন বলে উচ্চস্বরে মাঝে মধ্যে দাবি করেন।  এব্যাপারে এএসআই নুরুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন। নুরুল আমিনের কর্মকান্ড ও অর্থ বিত্তর  ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি দাবি করেছেন যশোরের বিভিন্ন পেশার মানুষ।