যশোর অফিস
যশোরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে বাড়তে শুরু করেছে রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছে ৪৫ জন রোগী। বর্তমানে নির্ধারিত শয্যার ১৩গুন বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালে। এ বাড়তি রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দাবি আবহাওয়া পরিবর্তন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের কারণে এ প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তবে চিকিৎসায় কোন সংকট নেই।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয় ওয়ার্ডের নির্ধারিত শয্যা সংখ্যা মাত্র ৫টি। বর্তমানে এই ওয়ার্ডে শয্যার বাইরেও বারান্দাসহ হাসপাতালে বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা। রোগীদের মতে আবহাওয়া পরিবর্তনের পাশাপাশি ইফতারে ভাজাপোড়া খাওয়ার কারণে আক্রান্ত হয়েছেন তারা। এবং অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শাহাদত হোসেন নামে এক রোগী জানান, গত ৩/৪দিন ধরে বমি ও বার বার পায়খানা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে কোন কাজ হয়নি। যে কারণে গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন শরীর একটু ভালো।
রবিউল আলম নামে এক রোগী জানান, গত কয়েকদিন ধরে গরম ঠান্ডা বিরাজ করছে। এর মধ্যে ইফতারিতে ভাজাপোড়া খাওয়া হয়েছে। হয়ত এ কারণেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছি। শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলো। যে কারণে হাসপাতালে ভর্তি হই। এখনও দুর্বলতা কাটেনি।
শাবানা বেগম নামে এক রোগী বলেন, প্রথম রোজা থেকেই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছি। বাড়ি বসে চিকিৎসা নিয়ে কোন লাভ হয়নি। যে কারণে সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। হাসপাতালে রোগীর যে চাপ বিছানা পায়নি। তাই বারান্দাতেই চিকিৎসা নিচ্ছি।
এদিকে সিনিয়র স্টাফ নার্স দিলারা খাতুন বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৪৫ জন রোগী। বর্তমানে ৫ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ৭০জন। এ অবস্থায় রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
এদিকে সহকারী অধ্যাপক পলাশ কুমার বিশ^াস বলেন, বর্তমানে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২৮জন নারী, ৩১জন পুরুষ ও ১৪জন শিশু রয়েছে। সব বয়সের মানুষের ডায়রিয়া হচ্ছে। আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে। আমরা ম্যানেজমেন্ট করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।
তিনি বলেন, সবার আগে নিরাপদ পানি পান করতে হবে। খাবারের ব্যাপারে পরিস্কার পরিচ্ছনতা থাকতে হবে। বিশেষ করে রাস্তার খাবার, বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবে। পাশাপাশি ডায়রিয়া হলে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন খেতে হবে, যাতে পানিশুন্যতা দেখা না দেয়। এরসাথে ডাবের পানি, চিড়ার পানি, কাচকলার তরকারি, থানকুনি পাতার রস খেতে হবে। শিশুদের বুকের দুধের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে।
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাললের মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক গৌতম আচার্য্য বলেন, মূলত আবহাওয়া পরিবর্তন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের কারণে এ প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বড় ধরণের কোন সমস্যা এখনও পাওয়া যায়নি। চিকিৎসায় কোন সংকট নেই। সকালে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরছেন