যশোরে ‘হিজাব ইস্যুতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়নি উদীচীর অক্ষর স্কুল

Share

যশোর অফিস: উদীচী পরিচালিত অক্ষর শিশু শিক্ষালয়ে সন্তানকে ভর্তি করাতে গিয়ে ‘হিজাব ইস্যুতে প্রত্যাখাত’ হওয়ার ঘটনায় যশোরের ডেপুটি কশিনার বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (সাবির্ক) সুজন সরকার মঙ্গলবার স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেছেন। এদিন বেলা ১২টার দিকে রেজোয়ান সিদ্দিকী, মহিদুল ইসলাম, সালমা খাতুন  ও মো. রাসেলের নেতৃত্বে আরও বেশ কয়েকজন অভিভাবক স্মারকলিপিটি দেন।

স্মারকলিপি সূত্রে জানা গেছে, সন্তানকে ওই স্কুলটিতে ভর্তির জন্য এক অভিভাবক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে সন্তানের হিজাব পরিহিত ছবি দিলে সেটি গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, ভর্তির পর প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরে আসাও যাবে না। হিজাব পরাতে চাইলে এখানে নয়; কোনো মাদ্রাসায় গিয়ে ভর্তি করান। পরবর্তীতে ওই অভিভাবক ভর্তি আবেদনের ফিস ফেরত চাইলে সেটি দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

স্মারলিপি থেকে আরও জানা গেছে, হিজাব ইস্যুতে সন্তানকে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি করাতে না পারা এক অভিভাবকের ফেসবুক পোস্ট থেকে এ খবর জানার পর প্রতিবাদ হিসেবে স্মারকলিপিটি দেওয়া হয়েছে।

স্মারকলিপি প্রদানকারীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রেজা সিদ্দিক নামে ওই অভিভাবকের ফেসবুক পোস্টে গিয়ে দেখা যায়; তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন- ‘যশোরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরতে বঁাধা

ভাবুন তো, আপনার আদরের ছোট্ট মেয়েটাকে ভর্তি করাতে নিয়ে গেছেন স্কুলেৃ আর প্রথমেই বলে দেওয়া হলো—‘হিজাব পরে আসলে ভর্তি নেওয়া হবে না।’ ঠিক এমনই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি আমি নিজে।

চলেন মূল ঘটনা বলি আপনাদের। তাহলেই বুঝতে পারবেন কেন আজ আমি লিখতে বসলাম। বাবা হিসেবে আসলে আমার করনীয় কি ছিলো আমার রাজকন্যাটার জন্য?

ঘটনার শুরুটা হয় ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ (সোমবার)। আমার আদরের কন্যা জুয়াইরিয়ার জন্য যশোরের স্বনামধন্য (!) একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি ফর্ম কিনতে যাই। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম “অক্ষর শিশু শিক্ষালয়”। এরপর ১৮ নভেম্বর, ২০২৫ (মঙ্গলবার) আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে সেই ভর্তি ফর্ম ফিলআপ করে জমা দিতে যাই। দুইজন ম্যাডাম ফর্ম জমা নিচ্ছেন। একজনের কাছে আমি ফর্ম এবং মেয়ের জন্মনিবন্ধন ও অন্যান্য ডকুমেন্টস জমা দিলাম। উক্ত ফর্মে আমার মেয়ের হিজাব পরিহিত ছবি সংযুক্ত ছিলো। এরপর ম্যাডামের সাথে আমার কথোপকথনটা এমন –

ম্যাডামঃ হিজাব বাদে অন্য কোন ছবি নেই?

আমিঃ কেন হিজাব পরিহিত ছবি দেওয়া যাবে না?

ম্যাডামঃ না। হিজাব ছাড়া ছবি লাগবে।

আমিঃ আচ্ছা। সেটা আমি দিচ্ছি ঠিক করে। কিন্তু আমার মেয়ে ভর্তি হওয়ার পর ক্লাসে কি হিজাব পরতে পারবে না?

ম্যাডামঃ না। হিজাব আমাদের ড্রেস কোডের বাইরে।

এরপর আমি আরো কিছু কথা বলতে চাইলাম। ম্যাডাম অন্য আরেকজনকে ডেকে তাকে সম্ভবত অফিসের ভেতরে কথা বলে আসতে বললেন। তিনি বাইরে বেরিয়ে বললেন, আমাদের ড্রেস কোডের বাইরে গিয়ে হিজাব এলাউ করা সম্ভব না।

আমিঃ চশমা তো ড্রেস কোডে নেই। তাহলে কি কেউ চশমা পরতে পারবে না?

তাদের উত্তর ছিলো – সেটা তো প্রয়োজন।

তারমানে হিজাবের কোন প্রয়োজন নেই। কেন মেয়ে হিজাব পরবে। আমি তাদের বললাম, তাহলে তো আমার ভুল হয়েছে। যখন ফর্ম কিনেছি তখনও তো কেউ বলেনি। এমনকি কোথাও তো লেখাও দেখালাম না যে “অক্ষর শিশু শিক্ষালয়” – এ পড়তে হলে হিজাব পরা যাবে না। এরপর আমি তাদেরকে বললাম, ফর্ম যেহেতু জমা নিবেন না, তাহলে ফর্ম এর টাকা ফেরত দেন। তারা বলল সেটাও নাকি নিয়ম নেই। যদিও আমি ভর্তি ফর্মে কোথাও সেই টাকা “অফেরতযোগ্য” – এমন কথা লেখা দেখিনি।

আমি জানি এই লেখাটি পড়ে অনেকেই বলবে, “স্কুলের নিয়ম”, “ড্রেস কোড”, “এতে রাগ করার কি আছে?”

কিন্তু আপনি দেখেন, যশোরের সব স্কুলেরই তো স্কুল ড্রেস আছে। তারা কি হিজাব পরে না? মহিলা পুলিশের ড্রেস এর সাথেও তো হিজাব পরতে দেখেছি আমি। সেক্ষেত্রে কি বলবেন আপনি?

হিজাব বাধ্যতামূলক হোক – তা আমার চাওয়ার বিষয় নয়। কারণ বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন মতের মানুষ তাদের মত করেই চলবেন, এটাই প্রকৃত স্বাধীনতা। তবে, হিজাব নিষিদ্ধ করা কখনোই মানবিক হতে পারে না।

শিশুদের স্কুল বাছাইয়ের নামে যদি তাদের আত্মসম্মান, ধর্মীয় বিশ্বাস ও স্বাধীনতা আগেই কেটে ফেলা হয় তাহলে আমরা ঠিক কোন সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি?

আজ আমি আমার মেয়ের জন্য দঁাড়িয়েছি, কাল হয়তো আপনার সন্তানের পালা আসবে। এই পোস্টটি শেয়ার করুন  কারণ আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে আমাদেরই।’

Read more