যশোর অফিস
যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের নীলরতন ধর সড়কে সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-আমডাঙা খালের টেন্ডার হলেও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে খাল সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারেনি। জরুরি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে খাল সংস্কার করা গেলে জলাবদ্ধতা নিরসণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
৮১ কিলোমিটার নদী খননের কাজ শুরু করা হয়নি। এ মাসের মধ্যে কাজ শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট-টিআরএম বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে হবে।
মাছের ঘের সংক্রান্ত নীতিমালা কার্যকর করার নির্দেশনা থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা কার্যকরী করছে না। জলবদ্ধতা স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে এটি আর একটি বড় কারণ। এই নীতিমালা লংঘন হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। গৃহীত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের সাথে সাথে কায়েমি স্বার্থবাদীদের কাছ থেকে নদী, খাল ও খাস জমি উদ্ধার করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল বলেন, গত বছর বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৫১৮ মিলি মিটার। এবার ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৭৮ মিলি মিটার দ্বিগুনেরও বেশি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। তারপরেও গতবছরের তুলনায় এবার জলবদ্ধতার মাত্রা কম। এর প্রধান কারণ ভবদহের আটটি স্লুইচ গেট খুলে দেওয়ায় ব্যাপক হারে পানি নেমেছে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত আরো দুইটি গেট অর্থাৎ দশটি গেট থেকে প্রবল বেগে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। যদি আরো ছয়টি গেট এই মুহূর্তে খুলে দেওয়া যায়- তাহলে জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘ম্যাজিক চেঞ্জ’ অথ্যাৎ বিষ্ময়কর পরিবর্তন ঘটবে এবং সপ্তাহের মধ্যেই পানি নিষ্কাসিত হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আর একটি বাধা হল টেকা ঘাটে এলজিইডি’র ডাইভার্শন রোডের সংকীর্ণ পানি বেরোবার পথ ভবদহ স্লুইচ গেট দিয়ে পানি বেরোবার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। এই মুহূর্ত এই বাধা অপসারণ করা জরুরি। তাহলে দ্রুতই ১৫০ গ্রামের বাড়ি-ঘর, আবাদ-ফসল, স্কুল-কলেজ জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ২০১২ সাল থেকে সকল গেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্ব তৎকালীন সরকারের প্রতিমন্ত্রীসহ কায়েমি স্বার্থবাদী মহলের ষড়যন্ত্রে বারোআউড়িয়া মোহনা পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার নদী হত্যা করা হয়। সরকারি অর্থ লুটপাটর স্বর্গরাজ্য তৈরি করে এবং সমগ্র এলাকা স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। ইতিপূর্বেও স্লুইচ গেট বন্ধ করে উদ্ভূত অনুরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যে সংশ্লিষ্টদের বিচারের করা জনগণের দাবি। বতর্মান সরকারের সক্রিয় উদ্যোগ ও বাস্তবোচিত প্রকল্পসমূহ গ্রহণে জনপদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা জনদুর্ভোগকে বাড়িয়ে তুলেছে। আমরা আশা করি- দ্রুত এ সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, উপদেষ্টা তসলিম-উর-রহমান, সদস্য নাজিম উদ্দিন, শিবপদ বিশ্বাস, শেখর বিশ্বাস, অনিল বিশ্বাস, সাধন বিশ্বাস, রাজু আহম্মেদ, আলমগীর হোসেন, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস প্রমুখ ।