যশোরে মামলার পর আলোচিত  স্কুল শিক্ষিকা লতা পলাতক

Share

যশোর অফিস 
শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারপিট করায় যশোরের মনিরামপুরের দেলুয়াবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ‘আলোচিত’ সেই শিক্ষিকা সালেহা খাতুন লতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বারবার পত্রিকায় শিরোনাম হওয়া লতা এখন পলাতক। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন দিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষকেরা।
জানা গেছে, গত সোমবার মেয়েকে পিটিয়ে আহত করায় মঙ্গলবার রাতে বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাছনিম খাতুনের মা লাকি খাতুন বাদি হয়ে মনিরামপুর থানায় মামলাটি করেন। লতার পাশাপাশি তার স্বামী গিয়াস উদ্দিন ফিরোজ, দুই ছেলে সালেহ উদ্দিন কাফী ও সালেহ উদ্দিন রাফী ওই মামলার আসামি।
মামলা এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে- বাদির মেয়ে বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। ২৫ আগস্ট সোমবার বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে ১নং আসামি সালেহা খাতুন লতা বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্র ক্লাস নিচ্ছিলেন। ক্লাসে তার মেয়েসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়া না পারার অভিযোগে লতা বেতের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। এতে তার মেয়ের ডান হাতের আঙ্গুল ভেঙে যাওয়া যায় এবং শিক্ষার্থী তাসনিয়া জামান রিতাসহ ৪/৫ গুরুতর আহত হয়। বিষয়টি তিনি এবং অন্যান্য অবিভাবকেরা জানতে পেরে স্কুলে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে ১নং আসামি লতা ক্ষিপ্ত হন। পরবর্তীতে অপর তিন আসামি ওই শিক্ষিকার স্বামী ও দুই ছেলে স্কুলে এসে আমাদেরকে, প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন রায় ও সহকারি প্রধান শিক্ষক তাসলিমা খাতুনসহ অন্য শিক্ষকদের মারপিটের চেষ্টা করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুলিশ, ইউএনও এবং শিক্ষা অফিসারকে জানান। তাৎক্ষণিক পুলিশ ও শিক্ষা অফিসারের প্রতিনিধি স্কুলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর আমার মেয়েকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই।
মনিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বাবলুর রহমান খান বলেন, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা নং-২৮। আসামিরা পলাতক। গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রশীদ বলেন, ঘটনার দিন স্কুলে আমাদের প্রতিনিধি যান। এই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন রায় বলেন, সোমবার শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার ঘটনায় শিক্ষিকা লতার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর তাকে বিদ্যালয়ে না আসতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না জানতে শোকজ করা হয়েছে। ২০১২ সালে যোগদানের পর থেকেই লতা বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত। তিনি মামলার ভয় দেখিয়ে সবাইকে তটস্ত রাখেন। আমি এখানে যোগদানের আগেও শিক্ষকদের নামে তিনি কথিত শ্লীলতাহানির অভিযোগে জিডি করেছিলেন।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে- চাকরির শুরু থেকে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত শিক্ষিকা লতা। ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বরে বিগত ম্যানেজিং কমিটি তাকে সাসপেন্ড করে। সে সাসপেনশন প্রত্যাহার না হলেও ছয় মাসের বেশি শিক্ষকদের সাপপেন্ড কার্যকর নয় মর্মে উচ্চ আদালতে নির্দেশনা থাকায় তিনি নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন ও ক্লাস ফেরেন। এরপরও তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর, বিদ্যালয় ভাঙচুরসহ শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এসব অভিযোগে গত জুলাইয়ে ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে বৈঠকে অভিভাবকেরা লতাকে স্থায়ী বহিস্কারের দাবি জানান। গত ১০ ও ১৩ আগস্ট তিনি বিদ্যালয়ের ভাঙচুর চালালে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষিকা স্কুলে আসলে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন।

Read more