জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে নারায়ণগঞ্জে দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা। এসময় উপদেষ্টারা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতিচারণ করেন। এই সরকারের আমলেই জুলাই গণহত্যার বিচার শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন আইন উপদেষ্টা।
সোমবার বিকালে নগরীর হাজীগঞ্জে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খান।
অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার যে গতিতে চলছে আমার দৃঢ় বিশ্বাস অন্তর্বর্তী সকারের শাসনামলেই আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার কাজ শেষ হবে।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় জুলাই হত্যার যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোর তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে করা মামলাগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর চার্জশিট ৫ আগস্টের আগে জমা দিতে পারবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, চার্জশিট দেওয়া হলে জুলাই হত্যার বিচারগুলো দ্রুত বিচার আইনে করা যায় কিনা তা বিবেচনা করা হবে।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয়ভাবে ভয়াবহ হত্যা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস কার্যক্রম হচ্ছে। জুলাই আগস্টের আন্দোলনে আমরা সবাই মিলে যেভাবে এক পরিবার হয়ে আন্দোলন করেছি, সন্ত্রাস চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াবে হবে। প্রশাসন সহায়তা করবে। এ সময় নারায়ণগঞ্জে জুলাই শহীদ পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন আইন উপদেষ্টা। কয়েকজন শহীদ পরিবারের সদস্য আইন উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ করেন, মামলা করে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নিজ এলাকায় যেতে পারছেন না। তাদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ৩৬ দিন দেশের ছাত্রজনতা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে স্বৈরাচার মুক্ত করেছে। এ আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে ৫৬ জন শহীদ হয়েছেন। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা ২১ জন। আহত হয়েছেন ৩৭০ জন। আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের একটি উদ্দেশ্য ছিল- তাহলো বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া। যারা জীবন দিয়ে বা আহত হয়ে স্বৈরাচার মুক্ত করলো তাদের স্মরণ করার জন্য নারায়ণগঞ্জে প্রথম জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হল।
শিল্প আদিলুর রহমান বলেন, গণভবনকে ফ্যাসিস্টের জাদুঘর হিসাবে গড়ে তোলা হবে। স্বৈরাচারের নির্যাতনের চিহ্ন সংরক্ষণ করে দেশের মানুষকে দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে- এই ভবন থেকে ফ্যাসিবাদের প্রধান দোসর কিভাবে নির্দেশ দিয়ে দেশের মানুষকে গুম-খুন করে, আয়নাঘর বানিয়ে মানুষকে নির্যাতন করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো আধিপত্য শক্তি বা স্বৈরাচার আবার আসার চেষ্টা করলে তা দমন করা হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ আদিলের মা বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমার ছেলেটা অনেক মেধাবী ছিল। সে বেঁচে থাকলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিতো। রেজাল্ট নিয়ে এসে মাকে জানাত। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেছুর রহমান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, গৃহায়ন ও গণর্পূত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফদ্দিন চৌধুরি, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা, পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদারসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ নিহতের পরিবারের স্বজন ও আহতরা।
এদিকে, স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে উল্লেখ করা ২১ জন শহীদ হলেন-রিয়া গোপ, মো. রোমান, আরমান মোল্লা, মো. ইরফান ভূইয়া, মো. তুহিন, মো. মোহসীন, মো. জনি, ইব্রাহিম, মো. স্বজন, মো. আদিল, পারভেজ হাওলাদার, মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া, সোলেমান, ইমরান হাসান, হযরত বিল্লাল, সফিকুল, মো. সজল, মো. মাবরুর হুসাইন, মোহাম্মদ মাহামুদুর রহমান খান, মোহাম্মদ সাইফুল হাসান ও আহসান কবির।