ইউরোপজুড়ে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে নাকাল জনজীবন

Share

ইউরোপের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত এক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা প্রচণ্ড গরম জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি ও জার্মানিতে তাপমাত্রা জুন মাসের অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা ইউরোপের তাপদাহ পরিস্থিতিকে পরিবেশ ধ্বংসের ফলে জলবায়ু ও আবহাওয়ার নতুন বাস্তবতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

স্পেনে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে
সোমবার (৩০ জুন) স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় আন্দালুসিয়া, কর্ডোবা ও সেভিয়ায় তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়িয়েছিল। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ প্রচণ্ড তাপের কারণে সৃষ্ট গরমজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে সারাদেশে সতর্কতা জারি করেছে। স্পেনের বিভিন্ন শহর দুপুরের পর থেকেই ফাঁকা ছিল। পর্যটনের মৌসুম চললেও পর্যটকদের বেশিরভাগ হোটেলেই অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাংলাদেশি প্রবাসীরা। প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, স্থানীয় প্রশাসন শিশু ও বয়স্কদের দুপুরের পর বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। অনেক শহরে স্কুলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু কিছু শহরে স্কুল ও সরকারি দফতরের দৈনন্দিন কাজের সময়সীমাও কমিয়ে আনা হয়েছে।

পর্তুগালে দাবানলের আশঙ্কা
জার্মানির গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, পর্তুগালে তাপদাহের কারণে বনাঞ্চলে দাবানলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশটির কয়েকটি অঞ্চলে ইতোমধ্যেই ছোটখাটো আগুনের খবর পাওয়া গেছে, যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল বাহিনী কাজ করছে। লিসবন ও আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছেছে। কর্তৃপক্ষ হাই অ্যালার্ট জারি করেছে এবং জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলেছে।

ইতালিতে রেড অ্যালার্ট
ইতালির আবহাওয়া অধিদফতর রোম, ফ্লোরেন্স ও বোলোনিয়াসহ বেশ কয়েকটি শহরে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গরমজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও এই গরমের প্রভাব পড়েছে। অনেক পর্যটক গন্তব্য বদলে দেশটির উত্তরাঞ্চলের ঠান্ডা জায়গায় চলে যাচ্ছেন।

জার্মানিতে জুন মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড
জার্মানির বার্লিন, মিউনিখ, হামবুর্গ ও ফ্রাঙ্কফুর্টে জুন মাসের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এমন অস্বাভাবিক গরম দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

এদিকে স্পেনে সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইউরোপের বর্তমান পরিস্থিতি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। এটা এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আরও মারাত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপের তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে। তারা সবাইকে ঘরে থাকার, বেশি করে পানি পানের এবং সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সময়সীমা কমানোর আহ্বানও জানানো হয়েছে।

Read more