যশোরে চোরাই ট্রাক বিকিকিনি ও কাটা সিন্ডিকেটের মুল হোতাদের খুঁজছে পুলিশ

Share

যশোর প্রতিনিধি: যশোর ও লক্ষীপুর পুলিশ রাজ কুমারকে আটকের ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু করলে তার ভাই পার্থ কুমার দা দেনদরবার ও দৌড়ঝাঁপে লিপ্ত হয়েছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

যশোর শহরের বকচর এলাকায় চোরাই গাড়ি বিকিকিনি, যন্ত্রাংশ খুলে ও কেটে বিক্রি করা সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা রাজ কুমারকে খুঁজছে পুলিশ। লক্ষীপুর থেকে চুরি করে আনা একটি ট্রাক তার ডেরা পিকে মটর্সের সামনে থেকে কাটা অবস্থায় উদ্ধারের পর তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।

দাবি উঠেছে, রাজ কুমার ও পার্থ কুমার দাকে আটক করলে ওই ট্রাক চুরির সাথে জড়িতদের নাম বেরিয়ে আসাসহ চোরাই আরো ট্রাকের খোঁজ মিলবে।
লক্ষীপুর সদর উপজেলা এলাকার ট্রাক ব্যবসায়ী মামুন আহমেদের একটি ট্রাক চুরি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। এ নিয়ে ১ মার্চ তিনি লক্ষীপুর থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। আর লক্ষীপুর থানা পুলিশের এসআই হুমায়ুন কবীর সোর্সের মাধ্যমে ও গোয়েন্দা তথ্যে জানতে পারেন, চুরি হওয়া টাকটি যশোরের বকচরে চোরাই ট্রাক বিকিকিনি ও কাটা সিন্ডিকেটে রয়েছে।

আর ওই তথ্যে ১ মার্চ রাতে বকচরে অভিযান পরিচালনা করেন। যশোর কোতোয়ালি থানাকে অবহিত করে এবং এসআই আলমগীর হোসেনকে সাথে নিয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরপর বকচরের চৌধুরী বাড়ির অদুরে বকুলতলায় রাজ কুমারের ডেরা পিকে মটরসের সামনে ওই চোরাই ট্রাকের কয়েক খন্ড পাওয়া যায়। কেবল কয়েকটি খন্ড করার পরপরই অভিযান চলে। এসময় খন্ড কেবিন ফেলে পালিয়ে যায় রাজ কুমারসহ চক্রের লোকজন। আর অদুরে পূজা মন্ডপের পাশে ওই চোরাই ট্রাকের চ্যাসিজসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ রয়েছে। এছাড়া পাশের একটি আলোচিত মটর্স থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের খোঁজ মেলে। এসময় কৌশলে আটক এড়িয়ে যান রাজ কুমার।
তথ্য মিলেছে, এই রাজ কুমার একটি চোর চক্রের যোগসাজস করে এই অনৈতিক কারবার করে চলেছে। তার ভাই সম্পর্কীয় পার্থ কুমার দার পিকে মটর্সের সামনে থেকেই লক্ষীপুর থেকে চুরি করে আনা একটি ট্রাকের খন্ড খন্ড অংশ মেলার পর আটক এড়াতে শুরু হয় দেনদরবার। স্থানীয়দের দাবি, সমিতির চোখ এড়িয়ে প্রায়ই রাজ কুমার চোরাই গাড়ি বেচাকেনা করে কেটে কেটে যন্ত্রাংশ বিক্রি করেন। রি-কন্ডিশন পার্টস বিক্রির বাহারি প্রচারনার সাইনবোর্ড লাগিয়ে চোর চক্রের লোকজনকে সাথে নিয়ে অবাধে এ কারবার চালিয়ে যাচ্চিলো বলেও অভিযানিক টিমের দাবি। অভিযানের খবর পেয়ে চোরাই সিন্ডিকেট সদস্য রাজকুমারকে আটকের দবি তোলেন স্থানীয় অনেকে।
তাদের দাবি, রাজ কুমার ও তার সেল্টার দাতা ভাই সম্পর্কীয় পার্থ কুমার দাকে আটকের আওতায় এনে জিজ্ঞাাসাবাদ করলে ট্রাক চোর চক্রের অনেকের নাম বেরিয়ে আসবে। চোরাই গাড়ি বিকিকিনি ও কাটা সিন্ডিকেটে আরো কারা আছে তাও পরিস্কার হবে। এছাড়া নেপথ্যে থেকে অর্থলগ্নি করে চোরাই ও পুরোনো গাড়ি বিকিকিনি কর্মকান্ড যারা পরিচালনা করছে তাদের নাম বেরিয়ে পড়বে।
সূত্রের দাবি, এই পার্থ কুমার দা ও রাজ কুমার যোগসাজসে তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে চোারাই কাজ সহজে করার জন্য।
এ ব্যাপারে লক্ষীপুর সদর থানার অভিযানিক অফিসার এসআই হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, যশোরের বকচরের চোরাই গাড়ি বিকিকিনি ও কাটা সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য রাজ কুমার। তাকে খোঁজা হচ্ছে। ট্রাক চুরির ঘটনায় যে মামলা হয়েছে ওই মামলায় তিনি এখন অভিযুক্ত। তাকে আটক না করার ব্যাপারে নানামুখি তদবিরও করছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তদন্ত চলমান রয়েছে। যে চোরাই গাড়িটি উদ্ধার করেছেন তাতে আরো কারা সম্পৃক্ত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। একটি মহল ট্রাক চোর চক্রের অন্যতম হোতা রাজ কুমারকে সেভ করার চেষ্টা করলেও পলাতক ওই রাজ কুমার তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে পুরাতন লোহা ও মোটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দের দাবি, রাজ কুমার যে ট্রাক কেটে বিক্রির চেষ্টা করেছে ওটা যে চোরাই তা সমিতির কেউই জানেন না। ওটা সমিতিকে আড়াল করে রাজ কুমার করেছে। তার এই চোরাই ও বিকিকিনি সিন্ডিকেট কারবারের দায় সমিতি বহন করবে না। বরং সমিতির পক্ষে লক্ষীপুর ও যশোর পুলিশের অভিযানিক টিমকে মাল উদ্ধারে ও তদন্তে সহায়তা করা হয়েছে। সমিতিও চায় চোরাই গাড়ি কাটা ও চুরি বন্ধ হোক। সঠিক কাগজপত্রের পুরোনো গাড়ি কিনে কেটে কেটে বিক্রি করতেই পারেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গাড়ি চুরি মানা যাবে না।

Read more