শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে যবিপ্রবির উপাচার্য আনোয়ারের পদত্যাগ

যশোর প্রতিনিধি: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন পদত্যাগ করেছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আজ বুধবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে মেইলের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে পত্র পাঠিয়েছেন। উপাচার্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পদত্যাগপত্রে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করেছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় সেশন জটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেছেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত ১৩ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ড. ইকবাল কবির জাহিদসহ উপাচার্যের অনুসারীদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করে। দাবি আদায়ে যবিপ্রবিতে বঙ্গবন্ধু ম্যাুরাল, শেখ হাসিনা ম্যাুরাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের বঙ্গবন্ধুর নাম ও বঙ্গবন্ধু একাডেমিকের গ্যালারির সামনে ছবি ভাস্কর্য্য ভাঙচুর করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা। পরে দিন কর্মসূচি থেকে ভিসির বাসা ও প্রশাসনিক ভবন তালা মেরে দেয় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। চলমান আন্দোলনের পেক্ষিতে গত সোমবার বিকালে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। এছাড়া পদত্যাগ পত্র জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ এবং উপাচার্য একান্ত সচিব মোঃ আব্দুর রশিদও। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ আনিছুর রহমান, শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মোঃ তানভীর ইসলামসহ হলটির সকল সহকারী প্রভোস্টবৃন্দ।

চলমান কর্মসূচির মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে উপাচার্যকে পদত্যাগ করার আল্টিমেটাম দেয়। এরপর উপাচার্য আজ নিজের অব্যাহতি চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যে আন্দোলন করলো, সেটা সর্ম্পকে আমার কিছু বলার নেই। তাদেরকে বলতে চাই, তারা ক্লাসরুমে ফিরে যাক। তারা জীবন গড়ুক। কারণ যেভাবে তারা আন্দোলন করছে, সেটা তো তাদের কাজ না। ট্রেজার, শিক্ষক, ভিসির বাসাতে যেয়ে জোর পূর্বক পদত্যাগের দাবিতে মিছিল স্লোগান দেওয়া তাদের কাজ না।  যে শিক্ষার্থীরা এতো বড় গণঅভ্যুথান ঘটালো, সেই শিক্ষার্থীরা যা করছে সেটা শিক্ষক হিসাবে আমার কাছে কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য না।

তিনি আরো বলেন, আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ মিথ্যা। যদি কোন দুনীর্তি করি, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে সরকার।’

প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ২০১৭ সালের ২০মে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) উপাচার্য পদে যোগদান করেন। চাকরির প্রথম মেয়াদে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ৫৫ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি ২০২১ সালের ১৯ মে তার পদের মেয়াদ শেষ করেন। একই বছরের ১ জুন তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসির দায়িত্ব পান।