যশোর জাবের হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা ; গঠন হয়নি তদন্ত কমিটি

যশোর প্রতিনিধি 
সরকার পতনকে কেন্দ্র করে দক্ষিনাঞ্চলের সর্ববৃহৎ নাশকতার ঘটনা ঘটে যশোর শহরের চিত্রার মোড়েসাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন ১৬ তলা বিশিষ্ট পাঁচ তারকা মানের জাবের হোটেলে। গত ৫ই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওইদিন বিকেলে ওই বহুতল ভবনে হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
যশো জেনারেল হাসপাতালের দেওয়া তথ্য মতে এ পর্যন্ত ওই ভবনের  অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যুর সংখ্যা পাওয়া যায়। তবে এরমধ্যে মৃত সকলের নাম পরিচয়ও পূর্ণাঙ্গভাবে মেলেনি। এছাড়া আশংকাজনক অগ্নিদগ্ধ ২৩ জনকে ওই হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করা হয়। তাদের মধ্যেও কেউ মারা গেছে কিনা সে বিষয়টিও অস্পষ্ট রয়ে গেছে।
ঘটনার সাতদিন অতিবাহিত হলেও এতো বড় একটি নাশকতা ও প্রাণহানির ঘটনায় এখনো তদন্ত কমিটি গঠন হয়নি। এদিকে জাবের হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি সচেতন মহলের। তবে প্রশাসন বলছে, ঘটনার পর থেকে পুলিশ নিরাপত্তা ঝুকিঁ ও আতঙ্কে কর্মবিরতিতে ছিল, ফলে তৎক্ষনাৎ কোন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) থেকে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় পুলিশি কার্যক্রম শুরু হলেও মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত এ নাশকতার ঘটনায় পুলিশের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে জেলা পুলিশ উর্ধতন কর্মকর্তারা বলছেন শীঘ্রই এ নাশকতার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সচেতন নাগরিক কমিটি যশোরের সভাপতি শাহিন ইকবাল বলেন, ‘এটি ন্যাকারজনক ঘটনা। এ ঘটনায় আমরা গোটা যশোরবাসী শোকাহত। গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশ কর্মবিরতিতে ছিল যার ফলে তখন তারা কোন মামলা বা আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যশোরবাসীর দাবি জাবির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অতি দ্রুত তদন্ত করে  প্রকৃত ঘটনার সাথে জড়িত ব্যাক্তিদের আইনের আওতায় আনা হোক। যশোরের প্রশাসনসহ বর্তমান অর্ন্তবর্তিকালীন সরকারের কাছেও আমাদের এই দাবিটি থাকবে।’
যশোর  জেনারেল হাসপাতালে( সুপার) তত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘জাবির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের হাসপাতালে রেকর্ড আছে। এ ঘটনায় আহত ২৩ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে সেটি আমাদের হাসপাতালে রেকর্ড হবে না বা আমরা জানতে পারবো না।
যশোর জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘ জাবির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি এখনো পুলিশে রেকর্ড হয়নি। পুলিশ মাঠে ছিল না। আমি পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলবো। পুলিশ কাজ শুরু করেছে, পুলিশ এটি নিয়ে তদন্ত করবে। আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সমন্বয় করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিব।
যশোরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ‘আমরা জাবের হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি গভীর এবং নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখছি। দুই-এক দিনের ভেতর তদন্ত কমিটি গঠনসহ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে যশোর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক সোহেল রানা জানান, প্রায় ১২ ঘন্টা ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুনটি সিড়ি এবং লিফট দিয়ে ধীরে ধীরে উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ভবনের প্রত্যােক মেঝেতে ফোমের আসবাপত্র ও কাঠের ডেকোরেশন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ভয়াবহ রুপ নিয়ে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়।