যশোরে সকালে ছাত্র-জনতার দখলে রাজপথ বিকালে আ: লীগের দখলে 

যশোর প্রতিনিধি: যশোরের রাজপথ ছাত্র-জনতার দখলে বিকালে আওয়ামী লীগের দখলে। রোববার সকাল থেকে মিছিলের শহরে পরিণত হয় ছাত্র জনতা বিকালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দখলে ছিল রাজপথ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে দেশব্যাপী চলা অসহযোগ আন্দোলনে অচল হয়ে  যশোর। এই অসহযোগ আন্দোলনকে সর্বাত্মক  রুপ দিতে যশোর শহরের সব ধরনের দোকান পাঠ ,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সকল প্রকারের স্বল্প ও দূর পাল্লার যানবাহনের চলাচল বন্ধ ছিল। যশোরের ২২টি রুটে চলাচল করেনি কোন যাত্রীবাহী বাস। টার্মিনাল ছাড়েনি কোন ট্রাক ও ট্যাঙ্কলরী। সকালে কাঁচা বাজার খুললেও বেলা ১২টা থেকে সব কিছু বন্ধ করে দেয় ব্যবসায়ীরা। কেবল মাত্র ফামের্সী ও খাবার হোটেল ছাড়া যশোর শহরের বেশিরভাগ দোকান পাঠ বন্ধ ছিল।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা। এই আন্দোলন বেগবান করতে সকাল ১১টায় শহরের চাঁচড়া মোড় থেকে মণিহার পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়। পূর্ব ঘোষিত এই অসহযোগ আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে যোগ দিতে বিভিন্ন দিক থেকে হাজার হাজার ছাত্র জনতা চাঁচড়া মোড়ে জড়ো হতে থাকে। বেলা ১১ টা থেকে সসমাবেশ স্থলে চলে প্রতিবাদী গান, কবিতা ও বক্তৃতা। বেলা ১২ টায় শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলটি চাচড়া মোড় থেকে শুরু হয়ে রেলগেট, মুজিব সড়ক, প্রেস ক্লাব, পোষ্ট অফিস পাড়া, এমএম আলী রোড, মাইকপট্টি, পাইপপট্টি, টিএন্ডটি কলোনী,রেল রোড, চৌরাস্তা,আরএন রোড হয়ে শহরের মণিহার চত্বরে পৌছায় দুপুর পৌনে ২ টায়। প্রচন্ড রৌদ্র উপেক্ষা করে মিছিল চলাকালে চাঁচড়া থেকে মণিহার পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে শত শত সাধারণ মা বোনেরা আন্দোলনরত ছাত্র জনতাকে দুই হাত নেড়ে অভিবাদন জানান এবং বাড়ি থেকে পানিসহ বিভিন্ন প্রকারের শুকনো খাবার এনে আন্দোলনকারীদের হাতে দিয়ে তাদের প্রতি সর্বস্তরের জনগণের সমর্থন প্রকাশ করেন। দীর্ঘ ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মিছিলে কমপক্ষে ১৫ /২০ হাজার শিক্ষার্থীদের সাথে কয়েক হাজার অভিভাবক অংশ গ্রহণ করেন। মিছিলটি মণিহার চত্বরে পৌছে প্রায় এক ঘন্টা সেখানে অবস্থান করার পর আন্দোলনকারীরা নিজ নিজ বাড়ি ঘরে ফিরে যায়।

অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং শান্তিপূর্ন এই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করে জেলা পুলিশ প্রশাসন  ও বিজিবির সদস্যরা কোন প্রকার বাঁধা বা উস্কানী প্রদান করেননি। এমনকি যশোর চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ি ও যশোর কোতয়ালী মডেল থানার প্রধান ফটক বন্ধ করে থানা অভ্যন্তরে অবস্থান করে পুলিশের সদস্যরা হাত নেড়ে মিছিলকারীদের প্রতি তাদের ভালোবাসার বহি:প্রকাশ করেন। অনেক পুলিশ সদস্য প্রাচীরের ওপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হাতে গোলাপ ফুল দিয়ে তাদের সাফল্য কামনা করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই গণবিস্ফোরণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আমরা নিজেদেরকে গণধিকৃত, জনরোষের শিকারে পরিণত করতে পারিনা। ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আমরা পারিবারিক ভাবে নানা রকম হেনস্তার শিকার হচ্ছি। আমাদের ছেলে মেয়েরাও ছাত্র। তারাও এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত। আমরা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে আমাদের ছেলে মেয়ে ও তাদের মায়েরা আমাদের ঘৃনা করবে। আমরা রাষ্ট্রের চাকুরী করি। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। আমরা সেই জনগণের সাথে আর বেঈমানী করতে পারছি না।