চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে আটক ২০

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: কারফিউ শিথিলের মধ্যেই চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পুলিশ। আজ সোমবার বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় ২০ আন্দোলনকারীকে আটক করেছে বলে জানায় পুলিশ। এছাড়া এ ঘটনায় সিএমপির কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তীসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। আর ইটের আঘাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টি ফোরের ভিডিওগ্রাফার আবু জাবেদ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের হেনস্থার শিকার হন দেশ রূপান্তর পত্রিকার ফটো সাংবাদিক আকমাল হোসাইন।

আটকদের মধ্যে চার শিক্ষার্থীর নাম–পরিচয় জানা গেছে। তারা হলো— বেসরকারি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমন, বাকলিয়া সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র আজমাঈন করিম নিহাল, গাছবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী জুলহাজ হোসেন ও চট্টগ্রাম আইন কলেজের শিক্ষার্থী মো. নজরুল। জামালখান প্রেসক্লাবের সামনে ও চেরাগী মোড় এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।

এর আগে, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দুপুর থেকেই প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তবে আগেই সেখানে সতর্ক অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাদের কঠোর অবস্থানের মুখে আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের পরিবর্তে চেরাগী পাহাড় মোড়ে খণ্ড খণ্ডভাবে এসে জড়ো হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই চেরাগী মোড়ের অন্যপাশে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরাও অবস্থান নেয়।

এসময় আন্দোলনকারী নারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাকার্ড ছিনিয়ে নেয় ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এতে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে। সেখান থেকে আটক করা হয় কয়েকজনকে।

এরপর অদূরেই কদম মোবারম শাহী জামে মসজিদের সামনে বিকেল ৪টার পর আন্দোলনকারী সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়ে ফের বিক্ষোভ শুরু করেন। একই সাথে আটক শিক্ষার্থীদের ছাড়াতে আন্দোলনকারীরা পুলিশের প্রিজনভ্যান আটকানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল ছুড়ে পুলিশ। এসময় বেশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণও ঘটে।

একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পিছু হটে। পরে জেএমসেন হল হয়ে কুসুমকুমারী স্কুলের সামনে দিয়ে চলে যায় তারা। বর্তমানে ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও, থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

দেশ রূপান্তর পত্রিকার ফটো সাংবাদিক আকমাল হো: সাংবাদিকদের  বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের সাথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের হাতাহাতির সময় ছবি তুলতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা আমার জামা ছিঁড়ে দেয়। এসময় ভিড়ের মধ্যে শরীরে খামচে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।

এদিকে, আহত ভিডিওগ্রাফার আবু জাবেদকে ঘটনার পরই স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে তাকে চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ রেখেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইমুন ইসলাম।

এ ঘটনায় ঘটনাস্থল উপস্থিত ছিলেন সিএমপির উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানসহ কোতোয়ালি জোনের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে বক্তব্য দিতে রাজি হননি তারা।

তবে সন্ধ্যায় সিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে বলেন, ‘অল্প কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা ঢুকে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। বিনা উসকানিতে তার এ কাজ করে। এসময় ২০ জনকে আটক করা হলেও, যাচাই-বাছাই শেষে যারা জড়িত নয় তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। এ ঘটনায় আমাদের একজন সহকারী কমিশনার, একজন উপ-পরিদর্শকসহ চারজন আহত হয়েছে। বর্তমানে তাদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে পরে মামলা দায়ের করা হবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ টিয়ার শেল ব্যবহার করে।