বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুরে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জসহ কমপক্ষে ২০জন আহত হয়েছে।
বুধবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। এতে ঢাকা বগুড়া মহসড়কে জান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা যায়, সারাদেশে চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনে সংহতি জানাতে মঙ্গলবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপ থেকে আজকের কর্মসূচির কথা জানানো হয়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সকাল ১১ টা থেকে শেরপুর শহীদি আলিয়া মাদ্রাসার সামনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সমবেত হতে থাকে কিন্তু ওখানে তারা অবস্থান করতে না পারায় হামছায়াপুর থেকে তারা মিছিল বের করে। পরে বেলা বাড়ার সাথে সাথে আন্দোলনকারীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। তারা মিছিল নিয়ে ধুনট মোড় থেকে মিছিল নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে আবারও পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা সুশৃংখলভাবে মিছিল করবে বলে অনুরোধ করলে পুলিশ তাদের সামনে যেতে দেয়। শিক্ষার্থীদের মিছিল মহাসড়ক অবরোধ করে বাসস্ট্যান্ড হয়ে উপজেলা পরিষদের সামনে ঘুরে আবারও শেরুয়া বটতলার দিকে যায়। প্রচন্ড গরমে প্রায় ৫ কিলোমিটার মিছিল করে আন্দোলনকারীরা ক্লান্ত হয়ে যায়। এসময় পুলিশ ধুনট মোড়ে অবস্থান নেয়। প্রায় আধা ঘন্টা পরে শিক্ষার্থীরা আবারও ধুনট মোড়ে এসে মহাসড়ক অবোরধ করে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের শ্লোগানে চারিদিক মুখরিত হয়। এসময় শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী, বগুড়ার শেরপুর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার সজীব শাহরিন, শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিমসহ পুলিশ সতর্ক অবস্থা নেয়। তারা আন্দোলনকারিদের মহাসড়ক থেকে সরে যেতে বলে। শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থানে অনড় থাকে এবং মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে মুহুর্তের মধ্যেই মহাসড়কের দুপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস কোচে ঢিল ছুড়ে মারলে পুলিশ তাদের মহাসড়ক থেকে পূর্ব দিকে ধর্মের রাস্তার দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে শুরু করে। এতে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম আহত হলে তাকে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন পুলিশও পাল্টা রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ছোড়ে। এতে প্রায় ৮ জন শিক্ষার্থী, ২ জন পথাচারী, তিনজন পুলিশ সদস্য ও ৭ জন সাংবাদিক আহত হয়।
পরে পুলিশের তোপের মুখে পড়ে এক পর্যায়ে আন্দোলনকারিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ ধুনট মোড়ে অবস্থান নিলে শিক্ষার্থীরা আবারও বাসস্ট্যান্ডে মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ আবারও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরে আবারো আন্দোলনকারীরা পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর সামনে অবস্থান নেয় পরে ওখানেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ পুলিশ সদস্যরা গিয়ে ছাত্রদের ছত্র ভঙ্গ করে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আন্দোলনকারী জানান, মঙ্গলবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে আজ ভোরে তাদের তিন জনকে পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আজকের মতো তাদের কর্মসূচী সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তাদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যহত থাকবে।
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শেরপুর থানার পাশাপাশি বগুড়া থেকে এক প্লাটুন পুলিশ ও তিন প্লাটুন র্যাব মাঠে আছে। জানগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি ব্যবহার করেছে। সব কিছু প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আছে।
এই ঘটনায় অন্যান্য আহত ব্যক্তিরা হলো অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেরপুর সার্কেল মোহাম্মদ সজীব শাহরিন, কনস্টেবল নূর হোসেন, সাংবাদিক রাশেদুল হক, বাঁধন কর্মকারে কৃষ্ণ, সৌরভ অধিকারী শুভ, রঞ্জন কুমার দে, আবু বকর সিদ্দিক,আবু জাহের, আব্দুল মমিন, মো. মিলন, রুহুল আমিন মারুফ, পিতা সেলিম, রণবীর বালা, জিম, পিতা মাহফুজুর রহমান, কলেজ রোড, নজরুল ইসলাম পিতা আজিবর রহমান, তালতলা, আব্দুস সামাদ পিতা আব্দুর গফুর মির্জাপুর, সুজন মমিনুল সরকার, সোনাহাটা, রহমত পিতা আব্দুল আজিজ উপজেলা, বাবু, পিতা,আব্দুর রাজ্জাক, গোপালপুর, নাছির উল্লাহ, আব্দুল কাদের শুবলি, আনোয়ার হোসেন, পিতা তসলিম উদ্দিন মমিনপুর গাড়িদহ, জয়নাল পিতা খরবেশ পরামানিক কামারকান্দি সহ আরো অনেকে।