পারমাণবিক যুদ্ধের বিষয়ে পশ্চিমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন রাশিয়া পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আগেও পৃথিবী একবার পারমাণবিক বোমার ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছে। পারমাণবিক যুদ্ধ না হলেও একতরফাভাবে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আমেরিকা পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল। সেটি ছিল একতরফা পারমাণবিক আক্রমণ। আর এখন কিন্তু হুমকি হচ্ছে পারমাণবিক যুদ্ধের। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ধরনের হুমকি ও পাল্টা হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তবে পারমাণবিক যুদ্ধের বিষয়ে পশ্চিমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। রাশিয়ায় নির্বাচনের মাত্র দুইদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের উদ্দেশে এই হংকার দিলেন তিনি।

বুধবার (১৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য প্রযুক্তিগতভাবে প্রস্তুত বলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুধবার পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছেন। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনে সৈন্য পাঠায় তবে তা যুদ্ধের একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হিসাবে বিবেচিত হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আগামী ১৫-১৭ মার্চ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ছয় বছরের মেয়াদের জন্য পুনরায় পুতিনই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। পুতিন অবশ্য বলেছেন, পারমাণবিক যুদ্ধের পরিস্থিতি ‘দ্রুত এগিয়ে আসছে’ না এবং তিনি ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন দেখেন না।
রাশিয়া সত্যিই পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ৭১ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট পুতিন রশিয়া-১ টেলিভিশন এবং সংবাদ সংস্থা আরআইএকে বলেন, ‘সামরিক-প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা অবশ্যই প্রস্তুত।’
পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে, যদি তারা রাশিয়ার ভূখণ্ডে – বা ইউক্রেনে মার্কিন সেনা মোতায়েন করে – তবে রাশিয়া এই পদক্ষেপকে হস্তক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, ‘(যুক্তরাষ্ট্রে) রাশিয়ান-আমেরিকান সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবং কৌশলগত সংযমের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে বিশেষজ্ঞ রয়েছে।’
তার ভাষায়, ‘অতএব, আমি মনে করি না, এখানে সবকিছু (পারমাণবিক সংঘর্ষ) তাড়াহুড়ো করে হবে, তবে আমরা এর জন্য প্রস্তুত।’

ইউক্রেনের যুদ্ধ ১৯৬২ সালের কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর থেকে পশ্চিমের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কের গভীরতম সঙ্কটের সূচনা করেছে এবং পুতিন বেশ কয়েকবার সতর্ক করে বলেছেন, পশ্চিমারা ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য সৈন্য পাঠালে সেটি পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করবে।
পুতিন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে লাখ লাখ সৈন্য পাঠিয়েছিলেন। আর সেটি একদিকে ইউক্রেনীয় বাহিনী এবং অন্যদিকে রাশিয়াপন্থি ইউক্রেনীয় এবং রাশিয়ান প্রক্সিদের মধ্যে পূর্ব ইউক্রেনে আট বছরের সংঘর্ষের পরে দেশটিতে পূর্ণ-মাত্রায় যুদ্ধের সূত্রপাত করে।
পশ্চিমা নেতারা ইউক্রেনে রাশিয়াকে পরাজিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলমান এই যুদ্ধে রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশের কিছু কম ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।
এদিকে মার্কিন নির্বাচনের বছরে পশ্চিমারা কীভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিয়েভকে সমর্থন করবে তা নিয়ে কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিয়েভ বলেছে, ইউক্রেনের জাতীয় পরিচয় মুছে ফেলার জন্য পরিকল্পিত একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করছে তারা।
তবে রাশিয়া বলছে, ইউক্রেনের যে এলাকাগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে সেগুলো এখন রাশিয়ার।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকেও পারমাণবিক যুদ্ধের বিষয়ে পশ্চিমাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন পুতিন। সেসময় তিনি বলেন, (পশ্চিমা দেশগুলোকে) অবশ্যই বুঝতে হবে আমাদেরও অস্ত্র আছে; যা তাদের ভূখণ্ডে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এসব সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার এবং মানব সভ্যতার ধ্বংসের হুমকি তৈরি করে। তারা কি তা বোঝে না।