বঙ্গভবনের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে দুইজন গুলিবিদ্ধ

ঢাকা অফিস ছবি: ফেসবুক
বঙ্গভবনের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে। এ ঘটনায় আরও সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে একজন আহত হয়েছেন।

একদল বিক্ষোভকারী বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয় মঙ্গলবার রাতে। পরে সেনাবাহিনী ও পিজিআর সদস্যরা বেরিকেডের সামনে অবস্থান নেয়।

গুলিবিদ্ধ দুইজন হলেন ফয়সাল আহমেদ বিশাল (২৪) ও শফিকুল ইসলাম (৪৫)। আর সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হন আরিফ (২০)। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোঃ ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বঙ্গভবনের সামনে থেকে ছররা গুলিতে আহত হয়ে দুইজন এবং সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হয়ে একজনকে আনা হলে জরুরি বিভাগের তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানিয়েছি।

গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসা শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে আমরা বঙ্গভবনের সামনে এসেছিলাম। এক শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ডান পায়ে গুলি লাগে। বর্তমানে হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসা নিচ্ছি।

এদিন বিকেল থেকেই বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নেয় কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই’২৪, ৩৬ জুলাই পরিষদ, জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদ, ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র–জনতার মঞ্চের নেতাকর্মীরা আছেন।

অবস্থান চলাকালীন বিক্ষোভকারীদের রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সন্ধান পর বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ বঙ্গভবনের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে সামনে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ সময় টিয়ারসেলও নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। এতে কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন। পরে পুলিশের ওপর চড়াও হয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় সেনাসদস্যদের বিক্ষুব্ধদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

এদিকে রাষ্ট্রপতির মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবির মধ্যে প্রধান বিচারপতির সৈয়দ রেফাত আহমেদের সাথে বৈঠক করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, তথ্য উপদেষ্টা নহিদ ইসলাম ও আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম। মঙ্গলবার বিকেলে বৈঠকের খবর নিশ্চিত হয়েছে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন।

এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন র‍্যাব ডিজি এ কে এম শহিদুর রহমান ও ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান।

ব্যারিকেড টপকে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা বিক্ষুব্ধদের ব্যারিকেড টপকে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা বিক্ষুব্ধদের
অন্যদিকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণজমায়েত করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এ সপ্তাহের মধ্যেই রাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করার দাবি জানান।

অবশ্য প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে জানান, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য সম্পর্কে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কথাই সরকারের বক্তব্য। রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সম্প্রতি মানবজমিনের প্রকাশনা জনতার চোখের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে -নেপথ্যের গল্পতে প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী জানান, রাষ্ট্রপতি তাকে জানিয়েছেন, তিনি শুনেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে গত সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন, যা শপথ ভঙ্গের শামিল।

অবশ্য সমালোচনা ওঠার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়। রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে সোমবার বঙ্গভবনের পাঠানো এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার উপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে সেগুলোর যাবতীয় উত্তর স্পেশাল রেফারেন্স নং-০১/২০২৪ এ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গত ৮ আগস্টের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎকার নেওয়া মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীও বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অসত্য কথা বলেননি।

গত সোমবার রাতে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে তিনি বলেন, ‘আসল ঘটনাটা কি সেটা জানার চেষ্টা করেছি আমি, অনেকদিন। তারপর প্রেসিডেন্ট (রাষ্ট্রপতি) সাহেবের সাথে কথা বলেছি। প্রেসিডেন্ট সাহেব যা সত্য তাই বলেছেন। এখানে ষড়যন্ত্রেরও কিছু নেই আর প্রেসিডেন্ট অসত্য কথা বলেছেন বলেও তো আমার মনে হয় না। তিনি তো পরিষ্কার বলেছেন, বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। ওই রিপোর্টেও কিন্তু তিনি নিজেই বলেছেন যে, এটা মীমাংসা হয়ে গেছে। সেটাও ছাপা হয়েছে।