সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: বিশ্বজিৎ কুমার অধিকারী, ওসি আশাশুনি।(ছবি: সংগৃহীত)
থানায় কতগুলো অস্ত্র থাকে জানেন? আপনাদের মতো ৫-১০ জনকে ধরে এনে গুলি করে থানার পুকুরে ভাসিয়ে দিলে কিছুই করতে পারবেন না।’
সাতক্ষীরার আশাশুনিতে বিরোধপূর্ণ একটি চিংড়ি ঘের মালিকদের এভাবেই হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিশ্বজিৎ কুমার অধিকারীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার প্রতিকার ও বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার গোকুল নগর গ্রামের মৃত ইছহাক মোড়লের ছেলে মো. মোছা মোড়ল জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে ওসি বিশ্বজিৎদের হাত থেকে রক্ষা করার আকুতি জানানো হয়েছে।
ঘের মালিকদের অভিযোগ, প্রকৃত মালিকদের থেকে ঘেরটি নিজের জিম্মায় নিয়ে অন্যদের দিয়ে দখল করিয়েছেন ওসি। পরে ৫৪ একরের ঘের একদিনেই শুকিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাছ ধরে পুরো টাকাই নিজ পকেটে নিয়েছেন তিনি।
এর আগে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে মামলা ওসি মামলা নেননি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গোকুলনগর গ্রামের কোপাত মোড়লের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন মোছা মোড়ল ও তার ওয়ারিশদের ৪৫ বিঘার ঘের দখল করতে যান। বিষয়টি নিয়ে তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি আশাশুনি থানার ওসি বিশ্বজিৎ কুমার অধিকারীর শরণাপন্ন হন এবং আসামিদের বিরুদ্ধে এজাহার জমা দেন। কিন্তু ওসি মামলা নথিভুক্ত না করে থানায় সালিশের প্রস্তাব দেন। অফিসার ইনচার্জের প্রস্তাবমতে পরের দিন বিকালে উভয়পক্ষ থানায় উপস্থিত হয়। এ সময় অফিসার ইনচার্জ নির্দেশ দেন যে, আদালতের কোনো নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত ওই সম্পত্তিতে কোনো পক্ষ যাবে না।
১৯ ফেব্রুয়ারি বিরোধপূর্ণ স্থানে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে থানার ওসিকে আদেশ দেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। ওই আদেশের প্রেক্ষিতে দুপক্ষকে নোটিশ জারি করেন এসআই মুহিতুর রহমান। নোটিশ জারি করার পর থেকে জমির প্রকৃত মালিক মোছা মোড়লরা সেখানে যাওয়া বন্ধ রাখার সুযোগে প্রতিপক্ষরা ঘেরে গিয়ে মাছ মারতে শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে অফিসার ইনচার্জকে ২৫ ফেব্রুয়ারি লিখিতভাবে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ ছাড়া বারবার ওসি ও এসআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সময়ক্ষেপণ করে অবৈধ দখলদারদের সুযোগ করে দিতে থাকেন। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে দখলকারীরা ঘের শুকিয়ে আনুমানিক ১৫ লাখ টাকার মাছ ধরে বিক্রি করে দেয়।
সবশেষ গত মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় উভয়পক্ষকে থানায় ডাকেন এসআই মুহিতুর রহমান। মঙ্গলবার থানায় দুপক্ষ হাজির হলে কোপাত মোড়ল একটি লাল রঙের ব্যাগে আনুমানিক ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ব্যাগটি অফিসার ইনচার্জকে বুঝিয়ে দেন। আগের রাত থেকে ঘের লুটের মাছ বিক্রি করা সমুদয় টাকা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ঘুস হিসেবে দেন কোপাত মোড়ল। এর আগের দিনও লুটপাট চালানোর জন্য ওসিকে ২ লাখ ও এসআই মুহিতুর রহমানকে ৫০ হাজার ঘুস দিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
লিখিত অভিযোগে মোছা মোড়ল উল্লেখ করে বলেন, মঙ্গলবার কোপাত মোড়ল অফিসার ইনচার্জের রুমে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর মোছা মোড়লসহ ঘেরের প্রকৃত মালিকদের ডাকা হয়। কক্ষে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। এ সময় তিনি সিদ্ধান্ত দেন, যারা ঘের দখল করেছে তারাই ঘেরে থাকবে। আমরা সম্পত্তির মালিক হিসেবে সেখানে গেলে আমাদের বিরুদ্ধে উলটো মামলা নিয়ে গ্রেপ্তার করা হবে। এ ছাড়া এই বিষয়ে কোনো রকম বাড়াবাড়ি করলে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
‘জীবন বাঁচাতে চাইলে চুপচাপ থাকার হুঁশিয়ারি দিয়ে ওসি বলেন, থানায় কতগুলো অস্ত্র থাকে জানেন? আপনাদের মতো ৫-১০ জনকে ধরে এনে গুলি করে থানার পুকুরে ভাসিয়ে দিলে কিছুই করতে পারবেন না।’
জানতে চাইলে অভিযোগকারী মোছা মোড়ল বলেন, ‘ওসি সাহেব প্রতারণার ফাঁদে ফেলে আমাদের থেকে প্রথমে উনি ঘের নিয়ে নিয়েছেন। পরে এবার অবৈধ দখলদারদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমার আমাদের মাছ লুট করা টাকা তিনি নিয়েছেন। এখন আমাদের মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি দিচ্ছে।’
এবিষয়ে অভিযুক্ত অফিসার ইনচার্জ বিশ্বজিৎ কুমার অধিকারীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে বার বার প্রশ্ন করা হলে ঘটনা জানেন বলে স্বীকার করে বলেন, এটা আদালতের বিষয়। আদালত দেখবেন।
গুলি করে পুকুরে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা মিথ্যা কথা। এর কোনো সত্যতা নেই।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকীর বক্তব্য জানতে কল করা হলেও পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে ঢাকায় থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সজিব খান জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে অভিযোগ জমা হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ গেলে ওনি অবশ্যই ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।