ঢাকা অফিস: স্বতন্ত্র এমপিদের কোনো জোট হবে না। স্বতন্ত্ররা সংসদে স্বতন্ত্রই থাকবেন। সংসদে তাদের মূল ভূমিকা কী হবে, তা চিফ হুইপ জানিয়ে দেবেন। তবে তারা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারবেন।
রবিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র এমপিদের এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্বতন্ত্র এমপিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া একাধিক স্বতন্ত্র এমপি এসব কথা জানিয়েছেন।
রবিবার বিকালে ৬২ জন স্বতন্ত্র এমপি গণভবনে যান। প্রায় দুই ঘণ্টা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের ইতিহাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম রেকর্ডসংখ্যক ৬২ জন স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী বিজয়ী হন। তাদের মধ্যে ৫৮ জন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বেশিসংখ্যক স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচিত হওয়ায় তারা জোটবদ্ধভাবে বিরোধী দল গঠন করতে যাচ্ছেন বলে আলোচনা উঠেছিল ৭ জানুয়ারির নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকে।
তবে সব জল্পনা-কল্পনা উড়িয়ে অবশেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে উপনেতা করে রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় সংসদ সচিবালয় থেকে।
সূত্র জানায়, স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়। স্বতন্ত্র এমপিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
গণভবনের ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র এমপি ঢাকা টাইমসকে জানান, মানুষ যে উদ্দেশ্য নিয়ে স্বতন্ত্র এমপিদের জনপ্রতিনিধি বানিয়েছে, তাদেরকে সেই উদ্দেশ্যে নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বতন্ত্র এমপি হলেও তাদেরকে সংসদে জোরালো ভূমিকা রাখতে বলেছেন তিনি।
এছাড়া ৬২ স্বতন্ত্র এমপি আইন অনুযায়ী যতটি সংরক্ষিত নারী আসন পাচ্ছেন, সেসব আসনে কারা নির্বাচিত হবেন, সেই ভার প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন উপস্থিত স্বতন্ত্র এমপিরা। শেখ হাসিনা যা করবেন সেটাই সবাই মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ওই অনুষ্ঠানে। স্বতন্ত্র এমপিরা সংসদে কোন ভূমিকায় থাকবেন, তা চিফ হুইপের সঙ্গে আলোচনা করে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও বার্তা দেওয়া হয় স্বতন্ত্র এমপিদের।
ঢাকা-১৮ আসনের স্বতন্ত্র এমপি খসরু চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। স্বতন্ত্রদের কোনো জোট হবে না।
তিনি বলেন, স্বতন্ত্র এমপিরা সংসদে স্বতন্ত্র হিসেবেই থাকবেন। সংরক্ষিত আসনে শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেই সিন্ধান্তই আমরা মেনে নেব।
গাইবান্ধা-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি শাহ সরোয়ার কবির বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংসদের ডান হাতও আমার বাম হাতও আমার। তোমরা আছো, থাকো সংসদে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সংসদে ভূমিকা কী হবে সেটা নিয়ে এইরকম আলোচনা হয়নি। আমাদের জন্যই এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাই এই সংসদে স্বতন্ত্র এমপিদের স্বাধীনতা থাকবে।
ময়মনসিংহ-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি বিএম আনিসুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনারা আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘জোট নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
ঢাকা-৪ আসনের স্বতন্ত্র এমপি আওলাদ হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বেশি কিছু নিয়ে আলোচনা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবাইকে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। যারা এমপি নির্বাচিত হয়েছে সবাই আমাদের। তাই সংসদের সমালোচনাও হবে গঠনমূলক। তবে স্বতন্ত্র এমপিদের নিয়ে কোনো জোট করার আলোচনা হয়নি।
স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্বতন্ত্ররা স্বতন্ত্রই থাকবে। তবে তারা সংসদে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারবে। এই একটা বিষয় আমাদের সংসদ নেতা, দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কারভাবে বলেছেন।
‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিভিন্ন মার্কার মধ্যে কিছু সংঘাত, সহিংসতা, অন্তঃকলহ হয়েছে। এখনো বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কোথাও অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা মেটাতে হবে।
তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র এমপিরা জানিয়েছেন তারা নিজেদেরকে আওয়ামী লীগ বাদে ভিন্ন পরিচয় দিতে তাদের আবেগ এবং বিবেক আহত হয়। সে অবস্থায় নিজেরা নিজেদের মধ্যে বিবাদ ও অন্তঃকলহ মেটাতে হবে।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাদেরকে মনোনীত করবেন তাদের প্রতি সমর্থন থাকবে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয়লাভ করেছে।
এর বাইরে এবার ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জিতেছেন। স্বতন্ত্র এমপিদের মধ্যে ৫৮ জনই সরাসরি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। তারা সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতা।