জলাবদ্ধতা নিরসনে খালে নেমে পরিচ্ছন্নতায় অংশ নিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

যশোর প্রতিনিধি 
যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালে নেমে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় অংশ নিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তাকে দেখে উৎসুক গ্রামবাসীও অংশ নেন এ কাজে। তার এমন উদ্যোগে খুশি জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ। জলাবদ্ধতা নিরসনে আগামীতেও এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
যশোরের অভিশাপ অভয়নগরের ভবদহ জলাবদ্ধতা। বর্তমানে জলাবদ্ধতা কিছুটা কম থাকলেও সংযোগ খালগুলোতে কুচুরিপানা, ময়লা আবর্জনা ও অবৈধ দখলদারদের দখলে থাকায় পানি নিষ্কাশনে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল। জেলা প্রশাসনের সহোযোগিতায় এবং উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শনিবার সকাল থেকে সারাদিন সুন্দলী ইউনিয়নের ডুমুরবিল থেকে পাথরঘাটা পর্যন্ত খাল পর্যন্ত খাল পুনরুদ্ধারের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় খালে নেমে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় অংশ নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কেএম আবু নওশাদ। তাকে দেখে দুইশতাধিক উৎসুক গ্রামবাসীও অংশ নেন এ কাজে। এ উদ্যোগের ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি, ফসল ফলানো সম্ভব হবে। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
গ্রামবাসী জানান, বছরের প্রায় অর্ধেকরও বেশি সময় ধরে ভবদহ অঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে থাকে। জলবদ্ধতার কারণে এ অঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে ফসল ফলাতে পারতো না কৃষকেরা। ফলে তাদের জীবন জীবিকাও বাধাগ্রস্ত হতো।খাল পুনরুদ্ধারের ফলে এ অঞ্চলের কৃষকেরা পুনরায় এ সকল কৃষি জমিতে ফসল ফলাতে পারবে, পাশাপাশি এ অঞ্চলের জলবদ্ধতার সমস্যা সমাধান হবে বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় রায় বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভবদহ জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগছি। সরকার একটি ভবদহ সেচ প্রকল্প দিলেও ছোট খাল গুলোতে অবৈধ দখলদারের কারণে, পানি নিষ্কাশন সচল না থাকায় তাতে বেশি সুফল পাওয়া যায় না। খাল পুনরুদ্ধার করা গেলে এ অঞ্চলের মানুষেরা জলবদ্ধতার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।
তুষার বিশ্বাস নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের এই জলবদ্ধতার কারণে আমরা জমিতে ফসল ফলাতে পারি না। বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় জমি পানিতে তলিয়ে থাকতো। খাল পুনরুদ্ধার করা হলে এ অঞ্চলের কৃষকেরা প্রায় ১০ হাজার হেক্টর ফসলের জমিতে ফসল ফলাতে পারবে।
নওয়াপাড়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল হাসান বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাল পুনরুদ্ধারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা প্রশংসনীয়। দীর্ঘদিন ধরে এ সকল খাল অবৈধ দখলে থাকার পরও পূর্বের কোন প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তবে নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদান করেই এ অঞ্চলের মানুষের দূর্দশার কথা চিন্তা করে এ খাল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ কাজে গ্রামবাসীর পাশাপাশি আমার কলেজের প্রায় ৪৫ জন শিক্ষার্থীও সহোযোগিতা করছে।
সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, ‘খাল পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের জলবদ্ধতার সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে। এ অঞ্চলের ১০ হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে ফসল ফলাতে পারবে কৃষকেরা। শুধু তাই নয়, এই সকল খালের পাশে বসবাসকারীরা খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। আমরা সর্বাত্বক ভাবে উপজেলা প্রশাসনকে সহোযোগিতা করছি।’
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আবু নওশাদ বলেন, ‘ভবদহ অঞ্চলের খালগুলো দীর্ঘদিন ধরে কচুরিপানা, আবর্জনায় ভরপুর ছিল। খালের পাশে বিভিন্ন অবৈধ দখলদার ছিল। জেলা প্রশাসনের সহোযোগিতা উপজেলা প্রশাসন এ খাল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে আজ খাল পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। এ কাজে গ্রামবাসী ও সেচ্ছাসেবকরা সহোযোগিতা করছে।
তিনি আরো বলেন, খালগুলোতে জলাবদ্ধতা নিরসন হলে অঞ্চলের মানুষেরা কৃষি জমিতে ফসল ফলাতে পারবে, এ খালে নৌকা নিয়ে যাতয়াত করতে পারবে এমনকি মৎস অভয়ারণ্যে সৃষ্টি হবে। জনস্বার্থে আমাদের অভিযান অব্যহত থাকবে। পরবর্তীতে কোন দখলদার যেন খালে বাধ বা পাটা দিতে না পারে সেজন্য সকলকে সচেতন করা হচ্ছেন। কেউ বাঁধ বা পাটা দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
৮০’র দশক থেকে যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর উপজেলা ও খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মানুষ জলাবদ্ধতায় জর্জরিত। এ এলাকাগুলোই ভবদহ নামে পরিচিত।