আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে পূর্ব আফ্রিকার একটি স্বতন্ত্র দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস। বিদেশি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে মরিশাসের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে দাবি করে মরিশাসের উত্তর অ্যাগালেগা দ্বীপে ভারত সামরিক ঘাঁটি তৈরির তোড়জোড় শুরু করেছে। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দেখা গেছে নতুন আলোড়ন।
মাদাগাস্কার থেকে এক হাজার ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে এই দ্বীপরাষ্ট্রটি। এর মধ্যে ছোট বড় বেশ কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে। তেমনই এক দ্বীপের নাম উত্তর অ্যাগালেগা। মরিশাসের মূল দ্বীপের থেকে অ্যাগালেগার দূরত্ব হাজার কিলোমিটার। নিতান্তই ছোট এই দ্বীপ। ২৫ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপটিতে মাত্র ৩৩০ জন নাগরিকের বাস।
সম্প্রতি প্রকাশিত আলজাজিরার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, উত্তর অ্যাগালেগা দ্বীপে ভারতীয় কর্মীরা সামরিক ঘাঁটি তৈরির কাজ করছেন। নৌ সামরিক পরিষেবা তৈরি করা হচ্ছে সেখানে।
আলজাজিরার দাবি, তারা বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ এবং অনুসন্ধানের পর এই তথ্য প্রকাশ করেছে। তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে তারা নিশ্চিত বলেও দাবি করা হয়েছে। কিন্তু ভারত বা মরিশাস সরকারের তরফে এমন তথ্য স্বীকার করা হয়নি।
আলজাজিরা জানিয়েছে, ভারত মহাসাগরের উপর এই ছোট্ট দ্বীপটিতে ভারতীয় কর্মীরা বেশ কিছু নির্মাণকার্যে হাত লাগিয়েছেন। পরিকাঠামোগত প্রক্রিয়া চলছে। নজরদারির কাজে সেই পরিকাঠামো ব্যবহৃত হতে পারে।
এদিকে মরিশাসে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের কথা স্বীকার না করলেও উত্তর অ্যাগালেগা দ্বীপে তাদের নজরদারি মূলক পরিকাঠামো নির্মাণের কথা মেনে নিয়েছে নয়াদিল্লি।
নয়াদিল্লির দাবি, ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতির অন্তর্গত এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নৌ সম্পর্কের উন্নয়নে তা কাজে লাগবে।
অন্যদিকে মরিশাস সরকার জানিয়েছে, এই নিরাপত্তা পরিকাঠামো ব্যবহার করবেন মরিশাসের নৌ বাহিনীর সদস্যেরা। তা সমুদ্রে নজরদারিতে কাজে লাগবে। এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে নারাজ দু’পক্ষই।
আলজাজিরা আরও দাবি করে, মরিশাসের দ্বীপে তিন হাজার কিলোমিটারের একটি রাস্তা বানিয়েছে ভারত। বিমানের সরঞ্জাম, ডুবোযান পরিষেবার নানা সামগ্রী সেখানে দেখা গেছে। সেনা ছাউনি তৈরির তোড়জোড়ও চলছে। আর এতে ভারত সরকাররের ২৫ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় দু’হাজার কোটি রুপির বেশি) খরচ হচ্ছে।
আলজাজিরা জানিয়েছে, বোয়িং পি-৮ নামের সামুদ্রিক নজরদারি বিমানটি অ্যাগালেগা দ্বীপে ভারতের সামরিক ঘাঁটি তৈরির অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ওই বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানির প্রয়োজন মেটাতে দ্বীপটিকে ব্যবহার করা হতে পারে।
প্রসংগত, ভারত মহাসাগর দীর্ঘ দিন ধরেই বিশ্বশক্তির নজরের কেন্দ্রে। চীন থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপানসহ একাধিক শক্তিধর রাষ্ট্র এই এলাকায় প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট। তবে ভারত যদি সত্যিই মরিশাসের দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করে, তবে তা পূর্ব আফ্রিকার সমুদ্রকেন্দ্রিক ভূ-রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের মতো দেশগুলি নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপকে কীভাবে গ্রহণ করে, সেটাও দেখার বিষয়।