যশোরের চৌগাছায় পুলিশের দু’ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নবজাতক বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ 

যশোর প্রতিনিধি 
যশোরের চৌগাছায় পুলিশের দু’ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে
নবজাতক বিক্রির ৬০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ।
পরকীয়া সম্পর্কের কারণে জন্ম নেওয়া নবজাতকের বাবা-মাকে মামলার ভয় দেখিয়ে তারা ওই টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
অভিযুক্ত দু’ পুলিশ কর্মকর্তা হলেন, চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম হোসেন ও আশিক হোসেন। এ ঘটনায় তাদের দু’জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামের সোনিয়া খাতুনের স্বামী ইলিয়াস হোসেন দু’ বছর ধরে ভারতের কারাগারে বন্দি। এ অবস্থায় একই গ্রামের আবু সাঈদের সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সোনিয়া। গত ২৫ সেপ্টেম্বর চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। দ্রুত বিষয়টি উভয়ের পরিবার জেনে যায়। সোনিয়া ও তার সন্তানকে আবু সাঈদ মেনে নিলেও তার পরিবার মেনে নেয়নি।
এ কারণে গত ২ অক্টোবর নবজাতককে পাশের টেঙ্গুরপুর গ্রামের নিঃসন্তান মুকুল খান ও আশা খান দম্পতির কাছে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন সোনিয়া-সাঈদ। নবজাতক বিক্রির বিষয়টি চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীমকে জানিয়ে দেন রকি নামে পুলিশের এক সোর্স। এরপর মামলার ভয় দেখিয়ে সোনিয়া ও সাঈদের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন এসআই শামীম। তার সঙ্গে ছিলেন এসআই আশিক হোসেন। বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হলে গত ২৪ অক্টোবর স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিদুল ইসলাম ও এসআই শামীম সোনিয়া-সাঈদের বিয়ে দিয়ে দেন। একই সঙ্গে লেনদেনের বিষয়ে কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।
সোনিয়া বলেন, ‘আমার চারদিন বয়সী মেয়েকে দত্তক দিয়েছি। বিনিময়ে ৭০ হাজার টাকা পেয়েছি। সেই টাকা থেকে পুলিশ মামলার ভয় দেখিয়ে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। এর সঙ্গে গ্রামের লোকও জড়িত। স্বামীর কাছে আর সামান্য কিছু টাকা আছে। আমার শ্বশুরবাড়ি যদি ওই শিশুকে ফিরিয়ে আনে তাহলে আমি তাকে ফেরত নেবো।
আবু সাঈদ বলেন, ‘বিবাহ বহির্ভূত নবজাতকের খবর শুনে এসআই শামীম ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন। প্রথম দফায় ৩০ হাজার টাকা ও পরে আরও ২৫ হাজার টাকা নেন তিনি। এছাড়া রকি পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছে।
আবু সাঈদের বাবা জালাল উদ্দিন বলেন,‘আমার একমাত্র ছেলে না হয় অন্যায় করেছে। সে তো বিয়েও করেছে। এরপরও পুলিশ আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি অনেক হাতে পায়ে ধরে ২৫ হাজার টাকায় রাজি করাই। এরপর গ্রামের একজনের কাছ থেকে ধার করে আরও ১৫ হাজার টাকা মেম্বার মহিদুল ইসলামকে দিয়েছি। তাকে আরও দশ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি করেছে।
এদিকে মুকুল খানের বাড়িতে গিয়ে নবজাতককে পাওয়া যায়নি। মুকুল খানের বাবা আব্দুল মান্নান জানান, নবজাতকটি অসুস্থ হওয়ায় তাকে চিকিৎসার জন্য যশোরে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিঃসন্তান মুকুল নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নবজাতকটি দত্তক নিয়েছে। যদি ঝামেলা হয় তাহলে তারা নবজাতক ফিরিয়ে দেবে।’ মুকুল খান দাবি করেন,‘সাঈদ-সোনিয়ার বিয়ে হয়নি এ বিষয় গোপন রেখেই আমার কাছে সন্তান দত্তক দেন তারা।
টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ইউপি মেম্বার মহিদুল বলেন, ‘এসআই শামীম বিষয়টি জানানোর পর মঙ্গলবার তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করি। শুনেছি এসআই শামীম ও রকি তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। ৭০ হাজার টাকায় নবজাতক বিক্রি করা হয়েছে বলে শুনেছি। রকি আমার সঙ্গী হলেও ওর অন্যায়ের দায় আমার না। এরা যদি নবজাতক ফেরত নিতে চায় সে ক্ষেত্রে আমি সহায়তা করবো।
এসআই শামীম বলেন, ‘ঘটনা মীমাংসার জন্য আমি সেখানে গিয়েছিলাম। মুকুল আদালত থেকে কাগজপত্র করে নবজাতকটি কিনেছে।
সাঈদ-সোনিয়ার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। এদিকে অভিযোগ ওঠার পর এসআই শামীম ও এসআই আশিককে প্রত্যাহার করে যশোর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘নবজাতক বিক্রির বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের দু’ এসআই প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি বলেন,দু’এসআইকে যশোর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন দু’ এসআইয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘তদন্ত করা হচ্ছে। টাকা লেনদেনের বিষয়টি প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।