অভয়নগর সাবরেজিস্ট্রি অফিস অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারার কথা শেষ কথা

যশোর প্রতিনিধি: যশোরের অভয়নগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ঘুষের লেনদেন চলে এখানে এক প্রকার ওপেন সিক্রেটে। এখানে দলিল লেখক, স্ট্যাম্প ভে-ার ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সমন্বয়ে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এখানে আসা সেবা প্রত্যাশীরা। আর এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারা খাতুন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই অফিসে যোগদানের পর থেকেই অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারা খাতুন চাল-চলন, জীবনযাত্রা সব কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার চাল-চলনের কাছে অফিসের কর্তারাও হার মেনে গেছে। ছোট একটি পদে চাকরি করে ১০ হাজার টাকা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন নওয়াপাড়া শহরে। চলে প্রাইভেট কারে। নওয়াপাড়া শহরের বাইরে গেলেই তিনি প্রাইভেট নিয়ে যান। নিজের বাড়ি শার্শার শালকোনা গ্রামেও যান মহারণি স্টাইলে।
সূত্র জানায়, মঞ্জুয়ারা ইশারা ছাড়া এখানে কোন কাজ হয় না। সিন্ডিকেটের প্রধান মঞ্জুয়ারা সাথে হাত মিলিয়ে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন, সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়ত নামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তার নামা দলিল রেজিষ্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। মোটা অংকের টাকা পেলেই অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারা সব কিছু জায়েজ করে দেন। এমনকি একজনের জমি অন্যজনের নামে দলিল করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, গত মাসে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অজয় কুমার সাহাকে খুলনার পাইকগাছায় বদলি হন। সাব-রেজিস্ট্রার অজয় কুমার সাহা বদলি হওয়ার পরই ক্ষমতাধর কর্মকর্তা বনে যান মঞ্জুয়ারা। স্থায়ী অফিসার না থাকার কারণে অফিস চালাচ্ছেন মঞ্জুয়ারা। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে আদায় করছেন লাখ লাখ টাকা। তার দাবিকৃত টাকা না দিলে হয়রাণি শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সূত্র জানায়, মঞ্জুয়ারা দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শেরেস্তার নামে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি দলিল থেকে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন।
জানা গেছে, সাধারণত জমি ক্রয় করতে গেলে গ্রহীতা ও দাতার ন্যাশনাল আইডি, ছবি, জমির পর্চা, দাখিলা ও দলিল অতি প্রয়োজন। রেজিস্ট্রি অফিসে ১০ লাখ টাকা ক্রয় মূল্যের একটা দলিলে সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দিতে হয়। অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারাকে দিতে হয় প্রতি লাখে ৩ হাজার টাকা। ইউপি ভ্যাট দিতে হয় প্রতি লাখে ১ হাজার টাকা করে। আর ফি বাবদ দিতে হয় প্রতি হাজার ১০ টাকা করে। স্ট্যাম্প বাবদ দিতে হয় প্রতি লাখে দেড় হাজার টাকা। সমিতিতে দিতে হয় দলিল প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা করে। প্রতিদিন গড়ে এই অফিসে ৪০ থেকে ৫০টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে। সেই অর্থে প্রতি মাসে এই অফিসে কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন হয়।
জানা যায়, দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) ছাড়া কোনো দলিল রেজিস্ট্রি হয় না এখানে। অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারার চাহিদা মোতাবেক টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাতে হয়রানি করা হয়। আবার টাকা পেলেই সব বৈধ হয়ে যায়। আবার মোটা অংকের টাকা পেলে অবৈধ্য কাগজপত্র তিনি বৈধ্যতা দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক জানান, শেরেস্তা না দিলে জমি রেজিস্ট্রি তো দূরের কথা সীমাহীন হয়রানির স্বীকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের। তাই বাধ্য হয়েই শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়। তবে কাগজপত্রে ঝামেলা থাকলে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় মঞ্জুয়ারাকে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রত্যেক দলিল থেকে শেরেস্তার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও সিন্ডিকেটের ভয়ে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয় না।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারা খাতুনকে ফোনে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া হলে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন। ইতস্তত করতে করতে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা সবই মিথ্যা। কথা শেষ না করেই তিনি ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে দেন।