বেনাপোলে সভাপতি ও সম্পাদক কর্তৃক দুই শ্রমিককে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় উত্তেজনা

যশোর প্রতিনিধি: বেনাপোল স্থল বন্দরের হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অত্যাচারে সাধারণ শ্রমিকরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে ন্যায্য পাওনা চাওয়ায় পুলিশের উপস্থিতিতে দুই শ্রমিককে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। এ নিয়ে বন্দরে শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলে বন্দরের আমদানি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

অভিযোগ রয়েছে,দীর্ঘদিন বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শ্রমিকি নিপীড়ণ ও অত্যাচারের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করে আসছে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাজু আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক ওহিদুজ্জামান ওহিদ। একেবারেই স্বৈরাচারি কায়দায় শ্রমিকদের পাওনা না দিয়ে তারা স্বেচ্ছাচারিভাবে ইউনিয়ন পরিচালনা করে আসছে।
সম্প্রতি এসব বিষয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ শ্রমিকরা ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে ইউনিয়নের ৫ বছরের আয় ও ব্যয়ের হিসেব চাইলে তারা শ্রমিকদের ওপর চরম অসন্তোষ হয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ সেপ্টেম্বর ইউনিয়নেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিক্ষুব্ধ দুই শ্রমিক দুই বেল্টু ও রাজুকে পাওনা বুঝে দেয়ার কথা বলে ইউনিয়ন অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজন মিলে রাজু ও বেল্টুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। শ্রমিকদের অভিযোগ এসময় সেখানে বেনাপোল পোর্ট থানার ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলের পাশেই অবস্থান করলেও তাদের সহযোগিতায় কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেনি তারা। পরে স্থানীয়রা তাদের দুজনকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে এনে ভর্তি করে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দর শ্রমিক বেল্টু ও রাজু বলেন, শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে প্রায় তিন কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। সাধারণ শ্রমিকরা এসব টাকা চাইলে তারা তাদেরকে বরখাস্ত করার হুমকি দেয়। এ পরিস্থিতিতে আমরা বেশ কয়েকজন শ্রমিক তাদের কাছে হিসেব চাইলে তারা আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং গত ৪ সেপ্টেম্বর অফিসে হিসেব দেয়ার কথা বলে ডেকে আমাদেরকে কুপিয়ে জখম করে।
হামলার বিষয়ে হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ওহিদুজ্জামান ওহিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই শ্রমিককে কুপিয়ে জখম করার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অন্য শ্রমিকরা তাদের কুপিয়েছে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের হিসেব দিতে আমরা বাধ্য নই। পারলে আপনারা এসে হিসেব নিয়ে যান।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, ইতিমধ্যে হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ওহিদুজ্জামান ওহিদের কাছে হিসেব ও পাওনা চাওয়ায় বেনাপোলের বেশ কয়েকজন শ্রমিককে বন্দরে ঢুকতে দিচ্ছেনা তারা। রঘুরানাথপুর গ্রামের বাকের হোসেনের ছেলে মনিরুল ইসলাম জানান, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের রোষানলে পড়ে তিনিসহ অন্তত ৮ জন শ্রমিক বরখাস্ত হয়েছেন। এখন তারা প্রাণ বাচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি শ্রমিক অসন্তোষ ও হামলার ঘটনা শুনেছেন বলে জানান। তিনি বন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা বিঘ্নকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।