শিল্পীর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা বুদ্ধ চৈতন্য সুফি লালনের ধারায় সুলতান

যশোর প্রতিনিধি 
বিশ্ববিখ্যাত চিত্রী এসএম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সুলতানের শিল্প ও জীবন-দর্শন’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে  প্রাচ্যসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আবুল হুসেন রাষ্ট্রসভা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রাচ্য আকাদেমির ওবায়দুল বারী হলে এই সভা হয়।
রাষ্ট্রসভার পরিচালক জাহিদ আককাজের সভাপতিত্বে এতে আলোচক ছিলেন নড়াইলের এসএম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অনাদি বৈরাগী এবং প্রাচ্যসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও সুপ্রিম কাউন্সিল সদস্য বেনজীন খান।
অনাদি বৈরাগী বলেন, সুলতান না থাকলে উপমহাদেশের শিল্পের উচ্চতা আজকের পর্যায়ে উঠতো না। বৈষয়িকতা তাঁকে টানেনি। টানলে তিনি ইউরোপ-আমেরিকায় বিলাসী জীবনযাপন করতে পারতেন। তাঁর জন্ম হয়েছে জাতির মাথা উঁচু করতে। তিনি ছবি না আঁকলেও সাধক হিসেবে অমর হয়ে থাকতেন।
তিনি বলেন, শিল্পী স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। কৃষকের অন্তর্নিহিত শক্তিকে সুলতান ছবির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। কৃষককেই তিনি নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
‘অ্যাকাডেমিক চর্চার ঊর্ধ্বে উঠার দুঃসাহস আমরা শুধু সুলতানের মধ্যেই দেখতে পাই। তিনি নিজস্ব ঘরানা, ভাষা তৈরি করে গেছেন সার্থকভাবে। সুলতানের জীবনটাই শিল্প। তিনি শিল্পী হওয়ার আগে সুন্দর মানুষ হওয়ার তাগাদা দিয়েছেন’, বলেন অনাদি।
বেনজীন খান তাঁর আলোচনায় বলেন, বাংলার জীবন-চিন্তার উপরে মহাপ্রভু গৌরাঙ্গ বা শ্রীচৈতন্যের প্রভাব অপরিসীম। আবার গৌরাঙ্গের চেতনার উপর প্রভাব ছিল মহামতি গৌতম বুদ্ধ ও ইসলামের সুফি ধারার। এই দুটি ধারাতেই জীবনের ধারণা ছিল প্রকৃতিনির্ভরতা বা সঞ্চয়হীনতা। অর্থাৎ বিষয়াসক্তি থেকে মুক্তি। সম্পদ-প্রাচুর্যের মোহ থেকে বিমুক্তি। মানে গৃহে থেকে গৃহবিবাগী। এই ধারাকে বড় বাংলায় বলা হয়, গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধারা। দর্শন-চিন্তার জগতে এই ধারার বিকশিত পুরুষ ছিলেন সাধক লালন ফকির। চিত্রশিল্পে তেমনি এই ধারার প্রাণপুরুষ এসএম সুলতান।
‘সুলতান বিশ্বাস করতেন, জাল যার জলা তার। লাঙল যার, জমি তার।’
বেনজীন খান শিল্পী সুলতানকে এই মাটির প্রকৃত প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরেন। আলোচনার মাধ্যমে তুলে আনেন সুলতান কীভাবে বাংলার প্রকৃত নায়কে পরিণত হয়েছিলেন।
আলোচনা সভা সঞ্চালন করেন সেলিম রেজা সেলিম। শুরুতে সুলতানের জীবনী সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন কামরুজ্জামান বাবলু।
অনুষ্ঠানমঞ্চে আরো ছিলেন প্রাচ্য আকাদেমির অধ্যক্ষ, বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ আশরাফ হোসেন ও প্রাচ্যসংঘের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খবির উদ্দিন সুইট।