যশোরে সভাপতির মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা প্রত্যাহার এবং স্কুলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

যশোর প্রতিনিধি ছাত্রীদের সাথে প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলীর অনৈতিক কর্মকান্ড, ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্যের বিরুদ্ধে সভাপতির মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা প্রত্যাহার এবং স্কুলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুরে সদর উপজেলার জঙ্গলবাঁধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দাতা এবং অভিভাবকসহ ম্যানেজিং কমিটির দুইজন সদস্য শফিকুল ইসলাম ও নাজিম উদ্দিন প্রেসক্লাব যশোরে এই সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় ওই স্কুলের অভিভাবক শহিদুল হক রিপন ও প্রতিবেশি সামছুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করে স্কুলের দাতা সদস্য শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সন্তানের জন্মদাতা পিতা-মাতা হলেও তাকে শিক্ষাদান করেন শিক্ষকরা। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী যশোর সদর উপজেলার জঙ্গলবাঁধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালের ১ জুলাই সভাপদি শহিদুল ইসলাম মিন্টুর আত্মীয় করণের মাধ্যমে জুলফিকার আলী প্রধান শিক্ষক হিসেবে ওই স্কুলে যোগদান করেন। এরপর থেকেই কোমলমতি মেয়েদের উপর কু-দৃষ্টি পড়ে। যে কারণে দিনের পর দিন শতাধিক মেয়ের শ্লীলতাহানী ঘটিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। বিশেষ কারণে মেয়েদের ছুটির প্রয়োজন হলে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকেই নিতে হয়। শুধু তাই নয় শারীরিক সমস্যায় প্রধান শিক্ষকের হাত থেকেই স্যানেটারি ন্যাপকিন নিতে বাধ্য করা হয়। দিনে দিনে বিষয়টি নিয়ে কেউ কাউকে বলতে না পারলেও মেয়েদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আর প্রধান শিক্ষকের ওই সকল অপকর্মের স্বাক্ষী তার কক্ষে থাকা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার হার্ডডিস্কটি রাতের বেলায় খুলে উধাও করে দেয়া হয়েছে। এই সকল বিষয় ভুক্তভোগী মেয়েরা সভাপতিকে জানায়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সভাপতির আত্মীয় হওয়ায় কোন কর্ণপাতই করেননি।
নিরুপায় হয়ে কয়েকজন মেয়ে ম্যানেজিং কমিটির একাধিকবার নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য নাজিম উদ্দিন এবং দাতা সদস্য শফিকুল ইসলামকে জানায়। এই দুই সদস্য বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সভাপতি শহিদুল ইসলঅম মিন্টুর কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেন। এছাড়া ২০২৩ সালে এসএসসি’র নির্বাচনী পরীক্ষায় শতাধিক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সাবজেক্ট প্রতি দুইশ’ টাকা করে নিয়ে ফরম পূরণের সুযোগ করে দেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। শুধু তাই নয় ওই স্কুলে সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সেশন ফি বাবদের ৬শ’ টাকা করে নেয়া হয়েছে। ভর্তি ফরম ক্রয়ের নামে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একশ’ টাকা করে নেয়া হয়েছে।
সভাপতি স্কুলের জমি দখল করে লিজ দিয়ে এবং নিজে চাষাবাদ করছেন। কাঁঠাল ও মেহগনি গাছ বিক্রি করে সেই টাকাও আত্মসাৎ করেছেন তারা দুইজনে। এই সকল টাকার হিসাব চেয়েছিলেন ওই দুই সদস্য শফিকুল ইসলাম ও নাজিম উদ্দিন। এতে করে সভাপতি ও তার আত্মীয় প্রধান শিক্ষক ওই জন সদস্যের বিরুদ্ধে চরমভাবে ক্ষীপ্ত হন। ফলে সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিন্টু গত ১৪ মে ওই দুই সদস্যের বিরুদ্ধে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাজানো ও কাল্পনিক একটি মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা করেন। মামলাটি সিআইডি পুলিশ তদন্ত করছে।
এর আগে মেয়েদের সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগে গত ৮ মে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য একজন অভিভাক প্রধান শিক্ষকের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। ওই মামলায় প্রধান শিক্ষক পুলিশি গ্রেপ্তার এড়াতে বেশ কয়েকদিন পলাতক ছিলেন। বর্তমানে হাইকোর্ট থেকে অন্তবর্তীকালিন জামিনে আছেন প্রধান শিক্ষক।
উল্লেখ্য গত ২০ মে একই গ্রামের বাসিন্দা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধ সিরাজুল ইসলাম টুকু সভাপতির বিরুদ্ধে স্কুলের গাছ বিক্রির করে টাকা ও জমি আত্মাতের অভিযোগে আদালতে একটি মামলা করেছেন।
এই সকল বিষয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার মিমাংসার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু একই গ্রামের কাশার হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিজেকে বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি এবং বড় কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতা আছে বলে স্কুলের সভাপতিকে ভুল বুঝিয়ে মিমাংসার পথটি বন্ধ করে দেন।
এছাড়াও বলা হয়েছে, উগ্র মেজাজি প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সমাবেশের মধ্যে একজন সিনিয়র শিক্ষকের উপর রাগ করে লাঠি মেরে চেয়ার ফেলে দেন।
পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়ের মামলার ঘটনার তারিখ গত ৮ মে। ওইদিনে নিজের অপকর্ম ঢাকতে গত ১০ জুন ব্যাকডেটে রেজুলেশনে স্বাক্ষর করানো হয়। এনিয়ে শিক্ষক এবং কমিটির অন্যান্য সদস্যের মধ্যে নানা ধরণের আলোচনা সমালোচনা চলছে।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডে বিচার এবং সভাপতি কর্তৃক স্কুলের জমি ও গাছপালা বিক্রির আত্মসাৎ করা টাকা ফেরতের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।