যশোরের চৌগাছায় শিক্ষকদেরকে লাঞ্চিত করায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ!

রোকনুজ্জামান, চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি:
যশোরের চৌগাছা মাসিলা মাধ্যমিক বিদ্যায়ের ৪জন শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করেছেন স্কুলের দাতা সদস্য (২ বছর মেয়াদি) হাফিজুর রহমান সোনা। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা প্রায় ২ ঘন্টা ব্যাপি স্কুলের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ প্রর্শন করেছেন।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় স্কুলের এ্যাসেম্বলি চলাকালিন সময়ে এ ঘটনা ঘটে। পেশায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান সোনা মাসিলা লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত গাফ্ফার আলী বিশ্বাসের ছেলে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিনুর রহমান এবং শারীরিক শিক্ষক টাইফুল ইসলামসহ সকল শিক্ষক এবং কর্মচারিরা অভিযোগ করেন যে, সোমবার স্কুলের এ্যাসেম্বিলিতে জাতীয় সঙ্গীত চলাকালিন স্কুলের ২ বছর মেয়াদি দাতা সদস্য হাফিজুর রহমান সোনা ও অভিভাবক সদস্য শিমুল হঠাৎ উপস্থিত হন। সেখানে উপস্থি হয়ে হাফিজুর রহমান সোনা দশম শ্রেনীর ৭জন শিক্ষার্থীদেরকে জাতীয় সঙ্গীত ঠিকমতো পরিবেশন না করার অপরাধে অভিযুক্ত করেন। এবং পুনরায় তাদেরকে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধ্য করনে। এবং শিক্ষদেরকে জাতীং সঙ্গীতের সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে ঘোরাফেরা করার নির্দেশ দেন। তখন শিক্ষরা জাতীয় সঙ্গীতের হাটাচলা করা মানে জাতীয় সঙ্গীতকে অপমান করা বলে জানান। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে হাফিজুর রহমান শিক্ষদের সাথে তুই তুমারি করাসহ অপমানজনক কথাবার্তা বলতে থাকেন। তিনি শারীরিক শিক্ষক টাইফুল ইসলামকে বিশ্রী ভাষায় গালমন্দ করেন। স্কুলের পাঠ দান পদ্ধতি এবং শিক্ষদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বাজে মন্তব্য করার সাথে সাথে সরকারের শিক্ষানীতিরও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। এছাড়া স্কুলের এ্যাসেম্বলিসহ অন্যান্য কর্মকান্ড পরিবর্তন করতে বলেন হাফিজুর রহমান সোনা। তখন শিক্ষকগন প্রতিবাদ করলে তিনি সহকারি শিক্ষক আসলাম হোসেনকে ঘাড় ধাক্কা দেন। এছাড়া সহকারি শিক্ষক ফারুক হোসাইন, হাসান তারেক এবং শিক্ষক নুরুন নবীকে যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করেন।
এঘটনায় স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান, ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে, এই স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে হাফিজুর রহমান সোনা পরাজিত হয়েছিলেন। নির্বাচনে হেরে তিনি বিভিন্ন সময়ে স্কুলে এসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে অপমানজনক আচরন করেন। আজকে তিনি শিক্ষকদের উপর চড়াও হলে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। তখন তিনি স্কুল ত্যাগ করেন। এদিকে বিক্ষোভের ঘটনা ফেসবুক লাইভে প্রচার হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা একজন সাংবাদিককে মুঠো ফোনে কল করেন। সেই সংযোগে তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়দেরকে ঘটনা সুষ্ঠ তদন্তে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা শান্ত হন। ঘন্টাখানিক পরে চৌগাছা থানা থেকে এসআই জয়নুল ঘটনাস্থলে আসেন। তিনিও ঘটনা সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা থানায় কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। তবে প্রধান শিক্ষক শাহিনুর রহমান বলেন আগামীকাল স্কুলের পিকনিক শেষে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য এই স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান বিএনপি পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত হাফিজুর রহমান সোনার বিরুদ্ধে সরাসরি নির্বাচনে অংমগ্রহন করে তাকে পরাজিত করেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন জানান, হাফিজুর রহমান এলাকার একজন অহঙ্কারি এবং বেয়াদপ লোক হিসেবে পরিচিত। তার বড় ভাই রেজাউল ইসলাম ছিলেন স্বরুপদাহ্ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি। পরের ভাই শামসুল আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হল ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এবং জাহাঙ্গির আলম বর্তমান সেই ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাসী হাফিজুর রহমান এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তাই তিনি কাউকেই পরোয়া করেন না।