চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধিঃ মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্সকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে যশোরের চৌগাছায় পাল্লা দিয়ে চলছে মাদক ব্যবসা। ভারত সীমান্ত পেরিয়ে উপজেলার চিহ্নিত কিছু গ্রাম থেকে অর্থের বিনিময়ে সেই মাদক উপজেলার সর্বত্র এবং যশোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌছে দিচ্ছেন সীমান্তলাগোয়া গ্রামগুলোর শিক্ষার্থীরা। গ্রেফতার হলে মামলাও হচ্ছে সেই সকল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। সীমান্তবাসিরা বলছেন উপজেলা, ইউনিয়নের কিছু রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি তাদের আত্মীয়স্বজন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দূর্নীতিগ্রস্ত দু’একজন সদস্যও এই কারবারে জড়িত। গত ২১ সেপ্টেম্বর পুলিশের “ওপেন হাউজ ডে’তে যশোর জেলা পুলিশ সুপারের কাছে উপজেলার একজন সাংবাদিক মাদক ব্যবসায়িদের সাথে থানার কিছু সদস্যের সখ্যতার অভিযোগ করেছিলেন। তবে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বিষয়টি “কল্পনা নির্ভর” বলে জানিয়েছেন।
কোটি টাকার মাদক ব্যবসার নিরাপদ বাহন যখন শিক্ষার্থীরা!
তবে উপজেলার সীমন্তলাগোয়া গ্রামগুলো ঘুরে সেই মাদক ব্যবসার সত্যতা মিলেছে। সেই সাথে মাদক ব্যবসায়িদের সাথে বিভিন্ন জনের অডিও রেকর্ডিং এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় যে, উপজেলার হিজলি বিওপি এবং আড়সিংড়েপুকুরিয়া চৌকি এলাকা ছাড়া সকল বিজিবি ক্যাম্পের এলাকাতে সকল চোরাচালান কড়াকড়ি ভাবে বন্ধ।
তথ্যনুসারে ভারতের পাচবেড়ে, ৪১ নং পিলার ও নওদাপাড়া থেকে নায়ড়া, গয়ড়া,ইন্দ্ররপুর, তিলকপুর এবং বল্লভপুরে প্রতিদিন বিভিন্ন ব্যবসায়িদের ফেন্সিডিলের চালান আসে। ভাগবাটোয়ারা এবং লেনদেন শেষে সেই মাদক শিক্ষার্থীরা এবং কারবারিরা মটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রো বা নিজস্ব বাহনে মাকাপুর, মাসিলা, গদাধরপুর, দিঘড়ি,কাকুড়িয়া, দৌলতপুর, বড় আন্দুলিয়া, ছোট আন্দুলিয়া, আড়শিংড়েপুকুরিয়া, পূড়াপাড়া হয়ে নানান গন্তব্যে পৌছায়। এক্ষেত্রে ফেন্সিডিল ও গাজার প্রতি চালানে বিজিবির নামে হিজলির মাদক ব্যবসায়ি জাকিরকে (নিজেকে বিজিবির সোর্স পরিচয়দানকারি) ৫হাজার টাকা করে দিতে হয়। সূত্রমতে প্রতিদিন ওইসব গ্রাম থেকে প্রায় ১০/১৫ হাজার বোতল ফেন্সিডিল (যার বর্তমান মূল্য ২৫শ টাকা প্রতি বোতল দরে প্রায় আড়াই থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি) যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে মাদকের পরিমান নির্ভর করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার উপর। মাদকের এই ব্যপক বিস্তারের পরেও জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা কেউ পুলিশি সম্পৃক্ততা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
এদিকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্থানীয় সূত্র এবং বিভিন্ন অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা যায় যে, উপজেলার মাকাপুরের আশরাফুল এবং বল্লভপুরের মোবারক মাদকের বড় কারবারি। একটি রেকর্ডিং অনুসারে প্রতিদিন একটি উৎস্য থেকে আশরাফুল নগদটাকা দিয়ে ১ হাজার বোতলেরও বেশি ফেন্সিডিল কিনে থাকেন। তার সিন্ডিকেটে মাকাপুরের রফিকুল, শুকুর, নুরুজ্জামান, চুটারহুদোর সেলিম, নওদাপাড়ার আলি খুড়ার মতো চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়িরা রয়েছে। তাদের পরেই ইন্দরপুরের টিটো হিজলির জাকির এবং শুভ’র গ্রুপ। তৃতীয়তে রয়েছে ইন্দরপুরের চুনু, গয়ড়ার মহাসিন, বিল্লাল, তোতা, তিলকপুরের লাল্টু, ঢেকিপুতার অসীম, মাসিলার সেলিম খুড়া এবং দিঘলসিংহার বিল্লাল। চতুর্থ গয়ড়ার বজলুর ছেলে টিটো, খোকন, চৌগাছার মুজিদের ছেলে ছনি, চানপুরের মেহেদি এবং যশোরের রনির রয়েছে একটি গ্রুপ । ইন্দরপুরের জহুরুল, চানপুরের (ইন্দরপুরে নানি বাড়ি) শাহিন, খালিদের ছেলে সবুজ রয়েছে পঞ্চম, ইন্দরপুরের লিটন, পারভেজ, আক্তার মিলিয়ে ষষ্ঠ এবং শওকতসহ অন্যান্যরা রয়েছেন শেষ গ্রুপে।
পুলিশ এবং জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা যায় ফেন্সিডিলের একক ডিলার হিসেবে বল্লভপুরের ইশাদুল, সীপন, মাসিলার চঞ্চল, সূজন, দিঘড়ির নিজাম, দিঘলসিংহের শাহিনুর, রবিন, চানপুরের মারুফ, শরিফুল, ফারুক, মনজু, কয়ারপাড়ার কুখ্যাত সাদ্দাম, জগন্নাথপুরের ইয়াবা সবুজ, ফুলসারার টিটো, বড় কাকুড়িয়ার মাজেদের নাম উল্লেখ্যযোগ্য। এছাড়া উপজেলার প্রায় সকল গ্রামে এবং সদরে পুলিশের তালিকাভ’ক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের রয়েছে নিজস্ব বিক্রয় স্পট। আবার কোনো কোনো নেতার ব্যক্তিগত মনোরঞ্জনের জন্য রয়েছে নিজস্ব মাদক সরবরাহকারি।
সীমান্তলাগোয়া সুখুপুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান এবং স্বরুপদাহর চেয়ারম্যান নুরুল কদর বলেন বিজিবি কঠোর অবস্থানে থাকলে মাদক নিয়ন্ত্রন সম্ভব।
উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড.মোস্তানিছুর রহমান মাদকের কথা স্বীকার করে বলেন, এনিয়ে উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রায় আলোচনা হচ্ছে।
মাদকের বিষয়ে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, সীমান্ত এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান সর্বদাই অব্যাহত আছে।
বিজিবি যশোরের কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে.কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকি বলেন শুধু মাদক কেনো, সীমান্তে চোরাচালান এবং নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি সর্বদা আপোষহীন। মাদকের দুএকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। তবে সেঘটনায় যদি কোনো বিজিবি সদস্য জড়িত থাকে তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া অচিরেই চিহ্নিত ওই সকল মাদক ব্যবসায়িদের আইনের আওতায় এনে মাদককে নিয়ন্ত্রন করা হবে বলে দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষনা করেন বিজিবি যশোরের কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে.কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকি
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধূরী, যুগ্ম-সম্পাদক এসএম সাইফুর রহমান বাবুল, মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেলসহ অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ স্বোচ্চার থাকার পরেও কেনো দিনকে দিন মাদকের বিস্তার বেড়েই চলেছে সেটার উত্তরই খুজে ফিরছেন উপজেলার সচেতন নাগরিকগন।