খুলনা জেনারেল হাসপাতালে বিদেশগামীদের কোভিড পরীক্ষার আড়াই কোটি টাকার ঘাপলা

মাধঘোপা নিউজ ডেস্ক: খুলনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বিদেশগামীদের কোভিডের (করোনাভাইরাস) নমুনা পরীক্ষার দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকার হিসেব মিলছে না। হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) প্রকাশকুমার দাশ এই টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছেন বলে অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিন দিন ধরে অফিসও করছেন না।

প্রকাশকুমার যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় খুলনা সদর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে খুলনার সিভিল সার্জন হিসেবে যোগ দেন চিকিৎসক নিয়াজ মোহাম্মদ। ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কও তিনি। যোগদান করার পর জানতে পারেন হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকরা সিভিল সার্জনের নাম করে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। গত এপ্রিলে ব্যাপারটি প্রমাণিত হওয়ার পর ওই হাসপাতাল থেকে কোভিড পরীক্ষার কাজ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের বাদ দেওয়া হয়। আর বিদেশগামীদের কোভিড পরীক্ষার মূল দায়িত্বে থাকা প্রকাশকুমারের কাছে সব পরীক্ষার তথ্য ও হিসেব চাওয়া হয়। তবে হিসেব জমা দিতে গড়িমসি করছিলেন তিনি।
প্রতিদিনই কোভিড পরীক্ষার টাকা হিসাব শাখায় জমা দিতেন প্রকাশকুমার। তবে তা যে সেবাগ্রহীতার চেয়ে কম, তা কেউ বুঝতে পারেননি।
সবশেষ গত ২২ আগস্ট সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে দেখা যায়, প্রকাশকুমারের জমা দেওয়া টাকার সঙ্গে দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকার অসংগতি রয়েছে। পরদিন প্রকাশকুমারকে কারণ দর্শানোর নোটিস ও ওই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চিঠি দেন সিভিল সার্জন। গত বৃহস্পতিবার ওই টাকা জমা দেওয়ার কথা ছিল।
হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে অফিসে এসে বিভিন্ন হিসেব নিয়ে বসেন প্রকাশকুমার। দুপুরের দিকে হঠাৎ বোনের মৃত্যুর কথা বলে অফিস থেকে বের হয়ে যান। এরপর থেকে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গত তিন দিন অফিসে আসেননি তিনি। বাসায় খোঁজ নিলেও সেখান থেকে জানানো হয়েছে তারা প্রকাশকুমারের ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
তারা বলেন, প্রতিদিনই কোভিড পরীক্ষার টাকা হিসাব শাখায় জমা দিতেন প্রকাশকুমার। তবে তা যে সেবাগ্রহীতার চেয়ে কম, তা কেউ বুঝতে পারেননি। প্রতিদিন জমা দেওয়ায় ব্যাপারটি নিয়ে কারও কোনো সন্দেহও হয়নি।
খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েও প্রকাশকুমারকে না পেয়ে খুলনা সদর থানায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি (প্রকাশ) যেন দেশত্যাগ করে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো