যশোর প্রতিনিধি: গত বছর ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৫১জন কুষ্ঠ রোগী সুস্থ্য হওয়া এবং বর্তমানে ১৬ জন কুষ্ঠরোগী সরকারি ভাবে চিকিৎসার আওতায় রয়েছে বলে রোববার সকালে যশোর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জেলার এ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তবে পরিসংখ্যান গত বছর কোন মাস থেকে গণনা করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু তথ্য দিতে পারেনি।
এদিকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে সরকার মিডিয়া প্রচারের উপরে গুরুত্ব দিলেও প্রচারের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ব্যপক অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাব রয়েছে। প্রচার বলতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নিজ সভা কক্ষে কতিপয় ব্যক্তি নিয়ে সভার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ রাখেন।
‘এখনই কাজ শুরু করি, কুষ্ঠ রোগ নির্মূল করি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অব্যবস্থাপনার মধ্যে বিশ্ব কুষ্ঠ দিবসের আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয়। ডেপুটি সিভিল সার্জনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও বাচতেঁ শেখা এনজিও’র মনিটরিং অফিসার মুকুট প্রান্সিস হালদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সিভিল সার্জন অফিসের আমন্ত্রণে বিশ্ব কুষ্ঠ দিবসের আলোচনা সভায় নিজেদের রোগমুক্তির কথা প্রকাশ করতে উপস্থিত হন সালেহা বেগম’র পরিবার।
সভায় তিনি বলেন, যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কাশিমনগর ইউনিয়নের ইত্তে গ্রামের আমার বাড়ি। ৩০ বছর আগে আমার দেবরে শরীরে থাকা এই রোগ আমিসহ পরিবারে ৫জন সদস্য আক্রান্ত হন। কুষ্ঠরোগে জন্য তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারতেন না। বের হলেই প্রতিবেশিরা দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতো। রাস্তায় চলাফেরা করলে অনেকে পাশ দিয়ে হেটে যেত না। বরং বাজে মন্তব্য করতো লোকে। লজ্জা, ভয়ে বাহিরে যেতাম না। তবে আল্লাহর রহমতে সরকারি চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছি পরিবারে সকল সদস্য।
শুধু যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সালেহা বেগম নয়; তাদের মতো কুষ্ঠ রোগে চিকিৎসা নিয়ে জেলায় গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৫১ জন কুষ্ঠরোগী সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে ১৬ জন কুষ্ঠরোগী সরকারি চিকিৎসার আওতায় রয়েছেন।
ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক বলেন, ‘কুষ্ঠরোগ কোন ভয়ের কারণ নয়। এটি নিরাময়যোগ্য। সরকারি চিকিৎসায় এটি পরিপূর্ণভাবে নির্মুল করা সম্ভব। কুষ্ঠরোগ নির্মূল করতে মাঠপর্যায় থেকে জনগনকে সচেতন করতে হবে, মাঠপর্যায় থেকে রোগ নির্ণয় করে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে সকলে সচেতন হয়ে এগিয়ে আসলে এ রোগ নির্মূল করা সম্ভব এবং আমরা একটি সুস্থ জাতি পাবো বলে আশা করি।’
এদিকে ‘বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সকাল ১০টায় হওয়ার কথা থাকলেও সঠিক সময়ে হয়নি। গ্রাম পর্যায়ের মানুষের সচেতনাতার জন্য প্রচার মাধ্যমের কোন ব্যবস্থা করেননি অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষে বিরুদ্ধে।
তবে ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক বলেন, প্রচারের ও মিডিয়কর্মীকে বলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অফিসের সেনেটারি পরিদর্শক শিশির পালকে। তিনি হয়ত সঠিক সময়ে সকল মিডিয়াকে জানাতে পারেননি। তবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে আগামীমে এমন ভুল হবে না বলে তিনি জানান।#