ঢাকা অফিস: নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ বুধবার দেশব্যাপী সমাবেশ করবে বিএনপি। একই দিনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে আজ দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দখলে থাকবে রাজধানী ঢাকা।
তবে বিএনপি দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বাস্তাবায়নে তৎপর থাকলেও আওয়ামী লীগ ভিন্ন কৌশলে মাঠে থাকবে। এ জন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিকালে বনানীতে শীতবস্ত্র বিতরণ করবে ক্ষমতাসীন দলটি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে রাজপথে অবস্থান করবে আওয়ামী লীগ। মহানগরে ইউনিট থেকে ওয়ার্ড, থানা থেকে মহানগর সব স্তরের নেতাকর্মী মহানগর আওয়ামী লীগের আলোচনা অংশ নেবেন। বিএনপি যাতে কোনো ধরনের অঘটন ঘটাতে না পারে, সেজন্য তারা রাজপথে সতর্ক থাকবে। পাশপাশি যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলটির অন্যান্য সহযোগী সংগঠনও রাজপথে সক্রিয় থাকার কথা জানান নেতারা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সমম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ দেশে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ছিল স্বাধীনতার পথে চূড়ান্ত মাইলফলক। বিএনপি ৭ মার্চ, ৭ জুন, ১৪ এপ্রিল, ১০ জানুয়ারি, ২৪ জানুয়ারি মানে না, পালন করে না। একাত্তরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার একমাত্র বৈধ অধিকার ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, অন্যরা পাঠকমাত্র।
কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ কারো সঙ্গে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয় না। এখন থেকে শুরু করে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, বিএনপি একটা সন্ত্রাসী দল। এদের দিয়ে রাজনীতি সম্ভব নয়। তারা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে না, ক্ষমতার জন্য তারা উন্মাদ হয়ে গেছে। তারা দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। দেশের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে মানুষ তাদের ছাড় দেবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাদের রাজনীতি থেকে চিরদিনের মতো বিতাড়িত করা উচিত। তারা দেশের মধ্যে সন্ত্রাসী কার্মকাণ্ডে লিপ্ত। এ দেশের সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিষবৃক্ষ হলো বিএনপি। তাদেরকে প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ নেতকার্মীরা মাঠে আছে।
অন্যদিকে সরকারবিরোধী চলমান যুগপৎ আন্দোলনের চতুর্থ কর্মসূচি হিসেবে আজ ঢাকাসহ সারাদেশের জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করবে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। ঢাকায় সমাবেশ হবে আট স্থানে।
দুপুর ২টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে দলটি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান ও সেলিমা রহমান।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু জানান, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ।
অবমূল্যায়নের অভিযোগে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে টানাপোড়েন চললেও মঞ্চের বুধবারের সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদ অংশগ্রহণ করবে। পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হানিফ এ তথ্য জানিয়েছেন।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ জানান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাদের সমাবেশ শুরু হবে বেলা ১১টায়।
১২ দলীয় জোটের নেতা শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী জানান, বুধবার বিকাল ৩টায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের নিচে তারা সমাবেশ করবেন।
এলডিপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন রাজ্জাক জানান, কাওরান বাজার এফডিসি সংলগ্ন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুপুর ২টায় সমাবেশ হবে। এছাড়া বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে বলে জানান জোটের সমন্বয়ক হারুন চৌধুরী। এদিকে বেলা ১১টায় মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম ও বাবুল সরদার চাখারীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) যৌথভাবে মতিঝিলের আরামবাগে সমাবেশ করবে বলে জানান গণফোরামের (মন্টু) তথ্য ও গণমাধ্যমবিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ মধু।
সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়কারী মুহাম্মদ সাইদুর রহমান জানান, বুধবার বেলা ১১টায় পুরানা পল্টন মোড়ে তাদের সমাবেশ হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, তাদের ১১ জ্যেষ্ঠ নেতা ঢাকার বাইরের মহানগরে যাচ্ছেন। তারা সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন।
বরিশালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহীতে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গাজীপুরে বরকত উল্লাহ বুলু, কুমিল্লায় মো. শাহজাহান, সিলেটে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ময়মনসিংহে শামসুজ্জামান দুদু, রংপুরে আহমেদ আজম খান, খুলনায় নিতাই রায় চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং ফরিদপুরে হাবিব উন নবী খান সোহেল যাবেন।
প্রিন্স জানান, বাকি জেলাগুলোয় সমাবেশ সফল করার দায়িত্ব পড়েছে স্থানীয় নেতাদের ওপর। জেলা-মহানগরের সমাবেশগুলো বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমন্বয় করবেন।