ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে বন্ধ ঘোষণার পরও চলছে যশোরর ঝিকরগাছা উপজেলার ছুটিপুরের বহু বিতর্কিত সীমান্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ২০২২ সালের ৩০ মে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে প্রতারণার দায়ে বন্ধ হয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে, নতুন করে আবারও আলোচনায় এসেছে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রেমিকের সাথে দেখা করতে এসে প্রেমিকা শ্রাবন্তি আক্তারকে মৃত ঘোষণা করার পর। জনমতে প্রশ্ন উঠেছে স্বাস্থ্য বিভাগের খাতায় বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠান থেকে কেমন করে রোগীকে ডাক্তার হাসানুজ্জামান মৃত ঘোষণা করলেন।
এ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত দুইশ’ টাকা ভিজিট নিয়ে রোগী দেখছেন গঙ্গানন্দপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার মফিজুরজু রহমান লাল্টু। আর প্যাথলজি বিভাগ সামাল দিচ্ছেন হুমায়ুন কবির নামে এক মেডিকেল এসিস্ট্যান।
সূত্র জানায়, নড়াইল জেলার ভুয়াখালীর পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের মৃতৃ শেখ নুরুর ছেলে হুমায়ুন কবির। তিনি সার্টিফিকেটে ব্যবহার করছেন ২০০০ সালে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাস। ২০০২ সালে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি ও ২০০৬ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স (সম্মান) পাস। তার অনার্স পাসের সার্টিফিকেটে রোল নম্বর ৩৯৬৬৭০, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১০৯৩৫৭ উল্লেখ রয়েছে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের
ওয়েবসাইটে এই আইডির কোনো শিক্ষার্থী নেই।
একই প্রতিষ্ঠানে ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ সেজে প্রতারণা করছেন গঙ্গানন্দপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার মফিজুরু রহমান লাল্টু। সাইনবোর্ডে ব্যবহার করছেন ডাক্তার মফিজুরজ রহমান লাল্টু, ডিএমএফ (ঢাকা), বিএইচএস (স্বাস্থ্য)। চিকিৎসা শেষে নিজের প্যাডে লিখে দিচ্ছেন প্রেসক্রিপশনও। তার প্রতিষ্ঠানে হোমিও, হারবাল, আয়ুর্বেদির্বে ক, অ্যালোপেথিকসহ সব ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়।
মূলত তার রোগীরা হচ্ছে গঙ্গানন্দপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের রোগীরা। গ্রামের দরিদ্র মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলে তিনি কৌশলে তাদের ভাগিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেন। সীমান্ত ডায়াগনস্টিক এন্ড ডায়াবেটিক কেয়ারে রোগীদের সকল প্যাথলজি পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ইসিজি ও ডায়াবেটিক রোগীদের বইসহ চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। অথচ এখানে কোনো প্যাথলজিস্ট বা মেডিকেল অফিসার নেই। কম্পিউটারে প্রিন্ট করে রোগীকে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে।
কথিত ডাক্তার মফিজুরু রহমান লাল্টুর ভাই এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সোমবার তিনটার দিকে মেয়েটিকে মৃত অবস্থায় তার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু এখান থেকে কেউ রোগীকে মৃত ঘোষণা করেননি। তাকে সরকারি হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। বন্ধ প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না।
সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, বন্ধ প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবা প্রদান কারার কোনো সুযোগ নেই। যদি করে থাকে তাকে রোগীর সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত আছে।