বহুজাতিক টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষ তুলনামূলক দুর্বল দল– এমন পরিস্থিতির সামনে পড়লেই বাংলাদেশের যেন ‘ত্রাহি মধুসূদন’ দশা হয়। সময়ে অসময়ে বড় জয়ও পায়, তবে সংখ্যাটা খুব কম; বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জিততে হয় কষ্টেসৃষ্টে, হারের সংখ্যাটাও নেহায়েত কম নয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের বদলে যাওয়ার শুরু ধরা হয় ২০০৭ বিশ্বকাপকে। সেই বিশ্বকাপ থেকে শুরু, সে রেওয়াজ এখনও বাংলাদেশ বেশ আয়োজন করে লালন করছে। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে হয়ে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে বারমুডাকে হারাতে বেগ পেতে হয়েছিল, নবাগত আয়ারল্যান্ডের কাছে তো হেরেই বসেছিল। সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেপাল আর নেদারল্যান্ডসকে হারাতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল দলকে। শেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তো নেদারল্যান্ডসের কাছে হারতেই হয়েছিল! ‘ট্রেন্ড’টা যে পাল্টায়নি, তা নিশ্চয়ই ধরতে পারছেন বেশ করে!
সে ভাবনাটা মাথায় রাখলে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের ২৪ নম্বর দল হংকংকে পুঁচকে মনে হয় না। বরং ম্যাচের আগে পঁচা শামুকে পা কাটার ভয়টা মনে জেঁকে বসতে বাধ্য। তবে সে শঙ্কা উড়িয়ে বাংলাদেশ জয় তুলে নিয়েছে নিজেদের প্রথম ম্যাচে। তাতে অন্তত স্বস্তিটা মিলেছে।
৭ উইকেটের ব্যবধান আর ১৪ বল হাতে রেখে জয়ের পরিসংখ্যান বলছে, জয়টা ‘দাপুটে’ই ছিল। কিন্তু আসলেও কি তাই? পুঁচকে দলের বিপক্ষে জয়টা তুলে নিলেও বাংলাদেশ কি মন ভরাতে পেরেছে আদৌ? উত্তরটা হবে– না। বাংলাদেশ তা পারেনি।
ছোট দলের বিপক্ষে বহুজাতিক টুর্নামেন্টে বড় দলের ম্যাচ মানে একটা প্রচ্ছন্ন চ্যালেঞ্জও, সে চ্যালেঞ্জটা নিজেদের বড় প্রমাণের। এশিয়া কাপের আগের দুই ম্যাচ দেখুন। এই হংকংকেই আফগানিস্তান হারিয়েছিল ৯৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। এরপর ভারত সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৫৭ রানে অলআউট করে ম্যাচ জিতেছে পাওয়ারপ্লে শেষের আগেই। এই দুই ম্যাচের কখনোই হংকং আর আমিরাত জিততে পারে, এমনটা মনে হয়নি। আফগানিস্তান আর ভারত সেটা মনে হতে দেয়নি একটি বারের জন্যও। বাংলাদেশেরও দায় ছিল এমন কিছুর পুনরাবৃত্তি ঘটানোর। তবে লিটন দাসের দল সে পরীক্ষায় উতরে যেতে পারেনি।
তাদের চ্যালেঞ্জ অবশ্য আরও একটা জায়গায় ছিল। বি গ্রুপের প্রথম ম্যাচে হংকংকে ৯৪ রানে হারিয়ে আফগানিস্তান নেট রান রেটেও বিশাল উন্নতি করে ফেলেছে। তাদের নেট রান রেট এখন ৪.৭০০। বাংলাদেশকে প্রথম ম্যাচে সেটাও পেছনে ফেলতে হতো।
কেন? তার কারণ লুকিয়ে পরের দুই ম্যাচে। ধরুন পরের দুই ম্যাচে বাংলাদেশ হারল আফগানিস্তানের কাছে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতল। ওদিকে শ্রীলঙ্কা আবার হারিয়ে দিল আফগানিস্তানকে। তাহলে তিন দলের পয়েন্টই সমান। তখন আসবে হংকং ম্যাচের হিসেব। দলটার বিপক্ষে আফগানিস্তান আর বাংলাদেশ তাদের রুটিন জয় তুলে নিয়েছে। শ্রীলঙ্কারটা এখনও বাকি, দৈব দুর্বিপাক না হলে তারাও জয়ই তুলে নেবে। তিন দলের পয়েন্ট সমান হলে কে হংকংকে বড় ব্যবধানে হারাল, সেটাই নিশ্চিত করে দেবে, কোন দুই দল যাবে সুপার ফোরে।
হংকংয়ের বিপক্ষে ১৪ বল হাতে রেখে জিতে বাংলাদেশের নেট রান রেট এখন ১.০০১। আফগানিস্তান থেকে যা ৩.৬৯৯ কম। শ্রীলঙ্কা হংকংয়ের বিপক্ষে কেমন দাপট দেখায়, আপাতত সেটাই দেখার বিষয়।
এসব তো আছেই। দলের পারফর্ম্যান্সও যে খুব বেশি মন ভরিয়েছে, তাও কিন্তু নয়। হংকংয়ের ১০ উইকেট তুলে নিতে পারেনি বাংলাদেশের বোলিং লাইন আপ, একটা সময় তো বড় রানের হুমকিও পাওয়া যাচ্ছিল! শেষমেশ তাদের ১৪৩ রানে আটকে রাখা গেছে বটে, তবে হংকংয়ের অমন বোলিংয়ের সামনে এই লক্ষ্য তাড়া করতে লেগে যায় ১৭.৪ ওভার। এই বিষয়টাও চোখে লেগেছে খুব করে।
লিটন দাস নিজের ফর্মটা টেনে এনেছেন এশিয়া কাপে, বিষয়টা স্বস্তির। তবে অস্বস্তি দিচ্ছে তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটিং। মিডল অর্ডারের সবচেয়ে বড় ভরসা তিনি। তবে এই টুর্নামেন্টে হৃদয় এসেছেন বাজে ফর্ম নিয়ে। হংকং ম্যাচে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেছেন বটে, এই ইনিংসে তাকে খেলতে হয়েছে ৩৬ বল, স্ট্রাইক রেট দুই অঙ্কের ঘরে যা মোটেও টি-টোয়েন্টিসুলভ নয়। অফ সাইডে ব্যাট চলছে না, যার ফলে বারবার শাফল করে চলে যেতে হচ্ছে অফস্টাম্পে, এক দেশের মিডল অর্ডারের সবচেয়ে বড় ভরসার এমন দশা তাই ভাবনার উদ্রেক করছে।
তবে এতকিছুর পরেও জয়টা তুলে নেওয়া গেছে, বিষয়টা আপাতত স্বস্তির। তবে আফগানিস্তান আর শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হওয়ার আগে এই জয়টা মন ভরাতে পারল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে বৈকি!