যশোর প্রতিনিধি
হিউম্যান এ্যাডুকেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (হিডো)’র ব্যানারে ভলেন্টিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা প্রদানের নামে যশোরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলিতে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পদে সভাপতি পরিচয়ে লায়ন তৌফিকুর রহমান ফয়েজজের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে। যশোরে অবস্থান রত ঝিকুর কাছে উপজেলার নাভারন ইউনিয়নের বাবুল মেম্বার ও ইমরুল নামে আরো একজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে সরকারী চাকুরীর নিশ্চয়তা দিয়ে হিডো’র কর্মকর্তারা জনবল সংগ্রহ করে নিয়োগ দেওয়ায় বিভিন্ন মহলে নানা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ইতিপূর্বে এই সংস্থার কবলে লাখ লাখ টাকা দিয়ে এখন হায়হায় করে টাকা ফেরতের জন্য ঘুরপাক খাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
হিউম্যান এ্যাডুকেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (হিডো)’র কতিপয় কর্মকর্তা পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষনা) এর দপ্তর,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,মহাখালী ঢাকার এক স্মারকে ভলেন্টিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা প্রদানের নিমিত্তে জনবলের চাহিদার কথা বলে আদেশ করায়। সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আদেশ পাঠানোর পর জেলাগুলির সিভিল সার্জনগন ওই সংস্থার বরাবর ভলেন্টিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা প্রদানের নিমিত্তে জনবলের চাহিদা প্রেরণ প্রসঙ্গে এক স্মারক পেশ করেন। সেই মোতাবেক যশোর জেলায় ২৯৩টি জনবল চাহিদা চেয়ে সিভিল সার্জন মহোদয় চিঠি প্রদান করে। জনবল পদগুলির মধ্যে ওয়ার্ড মাস্টার ৮টি, কম্পিউটার অপারেটর ১২টি, টিকিট ক্লার্ক ১২টি,ল্যাব সহকারী ১০টি, ডাক্তার এটেনডেন্ট ৫৫টি, তথ্য অনুসন্ধ্যানকারী ৯টি,অফিস সহায়ক ১৮টি,ওয়ার্ড বয় ৩৪টি, পরিচ্ছন্নকর্মী ৫১টি,সিকিউরিটিগার্ড ২৭টি,মালি ১৫টি, আয়া ২৭টি, ইলেকট্রিশিয়ান ৮টি ও পাম্প মেশিন অপারেটর ৭টিসহ মোট ২৯৩টি পদের চাহিদা উল্লেখ করেন। আর এই সুযোগে যশোর সদর বাদে বাকী ৭টি উপজেলায় হিডো সরকারী চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে মাথাপিছু লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বাধিক ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে শুরু করেন। জনবলের চাহিদা মোতাবেক যশোরের অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়ার্ড মাষ্টার ২টি,বাঘার পাড়ায় ১টি,ঝিকরগাছায় ২টি, কেশবপুরে ১টি শার্শা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২টিসহ মোট ৮টি,কম্পিউটার অপারেটর বাঘারপাড়া উপজেলায় ২টি, চৌগাছা উপজেলায় ৪টি, ঝিকরগাছায় ২টি, মণিরামপুর উপজেলায় ১টি ও শার্শা উপজেলায় ৩টিসহ ১২টি,টিকিট ক্লার্ক অভয়নগরে ২টি, বাঘারপাড়ায় ১টি, চৌগাছায় ৩টি, ঝিকরগাছায় ২টি, কেশবপুর মণিরামপুরে ১টি করে ও শার্শা উপজেলায় ২টিসহ ১২টি,ল্যাব সহকারী পদে বাঘারপাড়া স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ১টি, চৌগাছায় ৩টি, ঝিকরগাছায় ২টি, মনিরামপুরে ২টি ও শার্শা উপজেলায় ২টি করে মোট ১০টি, ডাক্তার এটেনডেন্ট পদে অভয়নগর উপজেলায় ১০টি,বাঘারপাড়ায় ৫টি, চৌগাছা উপজেলায় ১০টি, ঝিকরগাছা উপজেলায় ২০জন, কেশবপুর উপজেলায় ৫টি, শার্শা উপজেলায় ৫টিসহ মোট ৫৫টি,তথ্য অনুসন্ধানকারী অভয়নগর উপজেলায় ২টি,বাঘারপাড়া উপজেলায় ১টি, চৌগাছা উপজেলায় ১টি, ঝিকরগাছা উপজেলায় ২টি, মণিরামপুর উপজেলায় ২টি ও শার্শা উপজেলায় ২টিসহ মোট ১০টি,অফিস সহায়ক পদে অভয়নগর উপজেলায় ২টি, বাঘারপাড়া উপজেলায় ২ টি,চৌগাছা উপজেলায় ২টি,কেশবপুর উপ ]জেলায় ২টি ও ঝিকরগাছা উপজেলায় ৪ টি, মণিরামপুর উপজেলায় ২জন ও শার্শা উপজেলায় ৪ টিসহ মোট ১৮টি, ওয়ার্ড বয় অভয়নগর উপজেলায় ৩টি,বাঘারপাড়ায় ৩টি,চৌগাছা উপজেলায় ৬টি,ঝিকরগাছা উপজেলায় ১০টি,কেশবপুর উপজেলায় ২টি, মণিরামপুর উপজেলায় ৪টি ও শার্শা উপজেলায় ৬টিসহ মোট ৩৪টি,পরিচ্ছন্নকর্মী পদে অভয়নগর উপজেলায় ৬টি,বাঘারপাড়া উপজেলায় ৩টি,চৌগাছায় ১০টি,ঝিকরগাছা উপজেলায় ৯টি,কেশবপুর উপজেলায় ৮টি,মণিরামপুর উপজেলায় ৩টি ও শার্শা উপজেলায় ১২টিসহ মোট ৫১টি, সিকিউরিটিগার্ড পদে অভয়নগর উপজেলায় ৬টি,বাঘারপাড়া উপজেলায় ১টি,চৌগাছা উপজেলায় ৪টি,ঝিকরগাছা উপজেলায় ১২টি,কেশবপুর উপজেলায় ২টি ও শার্শা উপজেলায় ২টিসহ মোট ২৭টি, মালি পদে অভয়নগর উপজেলায় ২টি,চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ৬টি, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৪টি,কেশবপুর উপজেলায় ১টি ও শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২টিসহ মোট ১৫টি, আয়া পদে অভয়নগর উপজেলায় ৩টি, বাঘারপাড়া উপজেলায় ৩টি, চৌগাছা উপজেলায় ১০টি,ঝিকরগাছা উপজেলায় ২টি,কেশবপুর উপজেলায় ১টি,মণিরামপুর উপজেলায় ৩টি ও শার্শা উপজেলায় ৪টিসহ মোট ২৭টি,ইলেকট্রিশিয়ান পদে অভয়নগর উপজেলায় ১টি,চৌগাছায় ২টি,ঝিকরগাছায় ২টি,কেশবপুরে ১টি,মণিরামপুর উপজেলায় ১টি ও শার্শা উপজেলায় ১টিসহ মোট ৮টি ও পাম্প মেশিন অপারেটর পদে অভয়নগর উপজেলায় ১টি,চৌগাছা উপজেলায় ২টি,ঝিকরগাছায় ২টি,কেশবপুরে ১টি ও শার্শা উপজেলায় ১টিসহ মোট ৭টি পদে জনবল চাহিদা চেয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডাক্তার বিপ্লব কান্তি বিশ^াস গত ২৭ অক্টোবর এক স্মারকে হিডো’র চিঠি দেন। ওই চাহিদা পত্রে ৭টি শর্তাবলী উল্লেখ করেন। শর্তাবলীর প্রথম শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন সিভিল সার্জন যশোর কার্যালয় হতে কোন কর্মীর নিয়োগপত্র ইস্যু করা হবেনা। অত্র কার্যালয় কর্তৃক নির্বাচিত বোর্ডের মাধ্যমে কেবলমাত্র নির্বাচিত কর্মীদের নিয়োগপত্র ইস্যু করতে হবে। কর্মীদের কাছ থেকে চাকরীর কথা বলে কোন ভাবেই কোন টাকা পয়সা লেনদেন করা যাবে না। নিয়োগ পত্রে অবশ্যই প্রকল্পের মেয়াদ এবং বেতন ভাতাদির সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। নিয়োগকৃত কর্মীদ্বারা কোন অপরাধ সংঘঠিত হলে নিয়োগকৃত কর্তৃপক্ষের দ্বায়ভার বহন করতে হবে। কোন কর্মী চাকরি করতে না চাইলে কমপক্ষে ১ মাস পূর্বে সিভিল সার্জনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে এবং সংস্থার কাছে পৌছানো ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে নতুন লোক (যাচাই বাছাই কমিটির কর্তৃক অপেক্ষামান তালিকা হতে) নিয়োগ দিতে হবে। সর্বশেষ শর্তাবলী পালনে ব্যর্থ হলে বা যেকোন সময় কর্তৃপক্ষ আপনার চুক্তি বাতিলের ক্ষমতা সংরক্ষন করেন। হিডো’র নির্বাহী পরিচালক ফারুক হোসেন ও যশোরের সিভিল সার্জন ডাক্তার বিপ্লব কান্তি বিশ^াস স্বাক্ষরিত ৩শ’ টাকা নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে একটি চুক্তিপত্র গত ২৯ আগষ্ট সম্পন্ন হয়। চুক্তিপত্র করা হলেও হিডো’র কতিপয় কর্মকর্তা জনবল নিয়োগের নামে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহন করেছেন পর্যায়ক্রমে সরকারী চাকুরীর দোহায় দিয়ে। সিভিল সার্জন অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, হিডো’র নিয়োগে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ওয়ার্ড মাস্টার পদে নারী সিভিল সার্জন অফিসে খোজ নিতে এসে ওই কর্মকর্তার স্মরনাপন্ন হন। ওই নারী জানতে চান আদৌও এই নিয়োগ সরকারী হবে কিনা। সরকারী হওয়ার কোন সুযোগ নাই শুনে তিনি তৎক্ষনিক হিডোর কর্মকর্তার কাছে টাকা দিয়ে নিয়োগ পাবার বিষয় ফাঁস করে দেন। এই ধরনের অভিযোগ যশোরের ঝিকরগাছা,চৌগাছা,কেশবপুর,অভয়নগর উপজেলাসহ যেসব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল পুরনে যাদের ভলেনটিয়ার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকে হায় হুতাশ করভে। এব্যাপারে সিভিল সার্জন বলেছেন, এধরনের কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে চুক্তিপত্র অনুযায়ী বাতিল করা হবে।