নোয়াখালী প্রতিনিধি: নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রত্যয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্জনের মহাসড়ক ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গিকার এ বিজয়ের মাসে।
সোমবার দুপুরে নোয়াখালী শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
অতীত ইতিহাস উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, পলাশীর মীর-জাফরের প্রেতাত্না ভর করেছিলো খন্দকার মোস্তাকের ওপর, আর মীর-জাফরের সেনাপতির ন্যায় জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৫ আগষ্ট হত্যাকান্ডের মাস্টার মাইন্ড ছিলেন। একইভাবে জেলখানায় জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যাকান্ডের মাস্টার মাইন্ডও ছিলো জিয়াউর রহমান। ইতিহাসের বর্বর হত্যাকান্ডের সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা যদি বিদেশে না থাকতেন তাঁরাও এ হায়েনাদের হাতে নিহত হতেন।
এ সময় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে পুনঃরায় সভাপতি ঘোষণা করেন। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তা ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি। এ পদে জেলা আওয়ামী লীগের ডেলিগেটদের প্রত্যক্ষ ভোটেও হতে পারে বলেও এমন মন্তব্য করা হয়। এজন্য দলীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
‘খেলা হবে’ জনগণের পছন্দের স্লোগান উল্লেখ করে কাদের বলেন, আমি আজীবন এ স্লোগান দিয়ে যাব, এ স্লোগান জনগণ খুবই পছন্দ করে। তাই আমি বলবো, খেলা হবে, হবে খেলা। এ ডিসেম্বরে খেলা হবে, আগামী নির্বাচনে খেলা হবে, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে খেলা হবে, টাকা চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে খেলা হবে, দুর্ণীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। কিন্তু এ স্লোগান ফখরুলসহ আরও কয়েকজনের পছন্দ না। জনগণের পছন্দের এ স্লোগান আমি দিয়ে যাবো, আমি বলে যাবো খেলা হবে।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, একরামুল করিম চৌধুরী (স্থানীয় সাংসদ) আমার ছোট ভাই, দল এবং নোয়াখালীর স্বার্থে আমি একরামুল করিম চৌধুরী এমপি ও আমার ভাই আবদুল কাদের মির্জা সহ তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। কোন্দল মুক্ত নোয়াখালী আমি দেখতে চাই। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাও কোন্দল আর কোলাহল দেখতে চান না, পছন্দও করেন না।
সম্মেলনের বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ একই মঞ্চে তার বক্তব্যে বলেন, বাস-ট্রেনে পেট্টোল ঢেলে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করবেন, আর মামলা হলে গ্রেপ্তার করলে এখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা বলেন-বিএনপির নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার নামে নাইকো দুর্নীতি মামলাসহ আরও দুর্নীতির মামলা রয়েছে। এসব মামলার রায় হলে হয়তো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তাদের নেতাদের বাকি জীবন কারাগারেই থাকতে হবে। বিএনপিকে আহ্বান করে বলবো, দেশে আইন আছে, সরকার ও সংবিধান আছে। যেখানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সরকার সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে, সেখানে সমাবেশ করুন। অন্যভাবে সমাবেশ করার চেষ্টা করলে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের লক্ষ লক্ষ কর্মী আছে, তারাই আপনাদের নৈরাজ্য অপকর্ম রুখে দেবে।
সমাবেশে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ১৯ বছর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। দল পরিচালনা করতে গিয়ে পরিবারকেও সময় দেওয়া যায় না। কত কুতুব যে এখন আওয়ামী লীগে আছে, ওদের ঠান্ডা করে দল চালানো খুবই কষ্টকর। আমি দায়িত্ব পেয়ে এখানে ৫০জন লোকও পায়নি।
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র মো. সহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেলের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব মো. আবদুস সবুর, নোয়াখালী এমপি মোরশেদ আলম, এইচ এম ইব্রাহিম, মামুনুর রশীদ কিরণ, আয়েশা ফেরদাউস, সংরক্ষিত সাংসদ ফরিদা খানম সাকি প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, সবশেষ ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিলো। যেখানে সভাপতি হিসেবে পুনঃরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। কমিটি ঘোষণার পর থেকে দীর্ঘসময় নানান ঘাত প্রতিঘাত, সহিংসতা ও হতাহতের পর সেই কমিটি আর পূর্ণাঙ্গ না করে দুই বছরের মাথায় ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে আহবায়ক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেলকে যুগ্ম-আহবায়ক করে ৮৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।